ছন্দপতন: অন্ধকারে ডুবে টাইমস স্কোয়ার। টর্চ নিয়ে গাড়ি সামলাচ্ছেন এক ট্রাফিক পুলিশ। ম্যানহাটনে। এএফপি।
শনিবারের সন্ধে। আলো ঝলমলে ম্যানহাটনে হঠাৎ ছন্দপতন। টাইমস স্কোয়ারের ঝাঁ চকচকে বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডগুলো আচমকাই নিভে গিয়েছে। থমকে গিয়েছে ব্রডওয়ের একের পর এক শো। মাটির নীচে আটকে সাবওয়ে। তাতে আটক বহু যাত্রী। বহুতলের লিফ্টেও হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। রাস্তার ট্রাফিকের সিগনালে আলো নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বন্দি শহরবাসী। হলিউডের কোনও ছবি নয়। কাল কয়েক ঘণ্টা এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল নিউ ইয়র্ক শহর। মূলত ম্যানহাটন এলাকায়।
সন্ধে সাতটা নাগাদ আচমকাই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে ম্যানহাটনের বিস্তীর্ণ এলাকা। টাইমস স্কোয়ার থেকে শুরু করে সেভেনটি সেকেন্ড স্ট্রিট, ব্রডওয়ে, সেন্ট্রাল পার্কের পশ্চিম অংশ মিলিয়ে প্রায় তিরিশটি ব্লক বিদ্যুৎহীন হয়ে যায়। আঁধার নামে প্রায় ৪২ হাজার গ্রাহকের বাড়িতে। রাস্তার আলো নিভে যায়। অফিস, রেস্তরাঁতেও একই অবস্থা। আলো হাতে রাস্তার ট্রাফিক সামলাতে নামেন পুলিশ অফিসারেরা। তার মধ্যেই একের পর এক ফোন পেতে শুরু করে দমকল বিভাগ। লিফ্টে আটকে পড়ে অনেকেই তখন একসঙ্গে ফোন করতে শুরু করেছেন দমকলে। প্রবল গরমে কার্যত দমবন্ধ অবস্থা শহরবাসীর।
নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল দ্য ব্লাসিয়ো প্রথমে টুইট করে জানিয়েছিলেন ম্যানহোলে কোনও দুর্ঘটনার জেরে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর টুইট, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, আসলে কী ঘটেছে। পরে বিদ্যুৎ দফতরের তরফে জানানো হয়, একটি ট্রান্সফর্মারে আগুন লেগে যাওয়ায় এই বিপত্তি।
অন্ধকারে সাবওয়েতে আটকে থাকা অনেকেই টুইটারে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। কেউ লিখেছেন, প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেনে আটকে রয়েছেন। কেউ নিজের অন্ধকার অ্যাপার্টমেন্টের ছবি পোস্ট করেছেন। এক জন জানিয়েছেন, ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ির গতি এতই ধীর যে প্রায় ৪৫ মিনিট এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে থিয়েটার পাড়ায়। ব্রডওয়ের বেশির ভাগ শো বাতিল করতে হয়। ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে বাতিল হয়ে যায় পপ তারকা জেনিফার লোপেজ়ের একটি শো-ও। জেনিফার জানিয়েছেন, মাঝ পথে তাঁর শো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। টিকিট কেটে যাঁরা তাঁর অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন, সেই সব দর্শকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন গায়িকা। তবে অন্ধকারের মধ্যেই একটি কয়ারের দল রাস্তায় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রডওয়ের ‘হ্যামিলটন: অ্যান অ্যামেরিকান মিউজ়িকাল’-এর কলাকুশলীরাও রাস্তায় অনুষ্ঠান করেন। অনেক দর্শককেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে। চার ঘণ্টা পরে, রাত এগারোটার পরে আস্তে আস্তে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা হয়।
কালকের এই বিপর্যয় অনেককে মনে করে দিয়েছে বিয়াল্লিশ বছর আগের এ রকমই এক দিনের কথা। ১৯৭৭-এর ১৩-১৪ জুলাই আঁধারে ঢেকে গিয়ছেল গোটা নিউ ইয়র্ক শহর। সে বার টানা ২৫ ঘণ্টা ধরে
চলেছিল লুটতরাজ। অনেক ধরপাকড়ের শেষে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল সে বছর।