অনলাইনে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের পঠনপাঠন চালু হয়েছে ইউক্রেনে। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দেশে যুদ্ধ চলছে। হাজারে হাজারে মানুষ মারা যাচ্ছেন। রুশ হামলা থেকে জীবন বাঁচাতে কেউ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ বা মেট্রো স্টেশনে। সারা ক্ষণ সাইরেনের সতর্ক-আওয়াজ। ক্ষেপণাস্ত্রের হঠাৎ হামলা। এ সবের মধ্যেই অনলাইনে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের পঠনপাঠন চালু হল ইউক্রেনে। এমনটাই জানিয়েছেন ইউক্রেন ফেরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা।
পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি ইউক্রেনে। কিভ-সহ বেশ কিছু শহর থেকে হামলার খবর আসছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের সম্পর্কের টানাপড়েনের প্রভাব পড়ছে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতেও। সে কারণেই বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ অনলাইনে পঠনপাঠন শুরু করে দিয়েছে। তবে পঠনপাঠন শুরু হলেও সময়ের আগেই শিক্ষকেরা ক্লাস শেষ করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বেশ কিছু পড়ুয়া। মঙ্গলবার দুপুরে ইউক্রেনের বোগোমলেটস ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র মনমিত কুমার সার্জারির ক্লাস করেন। রুশ হামলার পর দেশে ফিরে প্রথম ক্লাসের অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্লাস চলতে চলতে সাইরনের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। তার মধ্যেই পড়াচ্ছিলেন স্যার। যদিও সময়ের আগেই উনি ক্লাস শেষ করে দিলেন। হয়তো বাঙ্কারে যেতে হবে ওঁকে।’’ বুধবার তাঁদের ক্যানসার সংক্রান্ত ক্লাস রয়েছে বলে জানিয়েছেন মনমিত। এক বর্ষের কয়েক জন পড়ুয়াকে নিয়ে ছোট ছেট দল তৈরি করে ক্লাস শুরু হয়েছে। মনমিতদের দলে রয়েছেন ৫ জন। তার মধ্যে চার জন ভারতীয়। এক জন লিবিয়ার।
মঙ্গলবার ইভানো মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির মিখাইল আলমদের ক্লাস হয় ১৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে। ইউক্রেন থেকে ফেরা ওই পড়ুয়া বলেন, ‘‘এর আগে করোনার জন্য যখন দেশে ফিরে এসেছিলাম, সেই সময় অনলাইন ক্লাস হয়েছিল। তার পর অবশ্য সব ক্লাসই অফলাইনে শুরু হয়ে যায়। এমনকি হামলার দিন পর্যন্ত অফলাইনে ক্লাস হয়েছে কিছু জায়গায়। এখন ক্লাস চালুর আগে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনলাইন ক্লাসের লিঙ্ক। পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শিক্ষকরাও নেটমাধ্যমে তৈরি করে নিয়েছেন গ্রুপ।’’
সোমবার থেকে মিখাইলদের অনলাইনে পঠনপাঠন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে ওই দিন প্রথম ক্লাস হয়নি তাঁদের। দ্বিতীয় ক্লাস হয়। মিখাইলের কথায়, ‘‘হয় বাড়ি, নয় তো যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই ক্লাস করাচ্ছেন স্যারেরা। শিক্ষকদের সকলে ইউক্রেনেও নেই। অনেকে অন্য দেশে চলে গিয়েছেন বলে শুনেছি।’’ শিক্ষকরা কেমন আছেন অনলাইনেই জানতে চান মিখাইল। অন্য প্রান্তে থাকা শিক্ষক শুধু ‘এখনও সেফ আছি’ বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর ৩টে ৪০ মিনিট থেকে শুরু হয় মিখাইলদের ফার্মাকোলজির ক্লাস। সেই ক্লাস চলে মিনিট দশেক। এ ছাড়া প্যাথলজির ক্লাসেরও রুটিন দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার। মিখাইল বলেন, ‘‘আগে দেড় থেকে তিন ঘণ্টা করে এক একটা ক্লাস করাতেন শিক্ষকরা। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। স্যারেরও ইন্টারনেটের সমস্যা হচ্ছিল। তাই কিছু হোমওয়ার্ক দিয়ে ক্লাস শেষ করে দিলেন।’’
কিভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির শেষ বর্ষের ছাত্র রোহন লস্করের মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ইউক্রেনের সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা (ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত সাড়ে ৯টা) নাগাদ শুরু হওয়ার কথা তাঁদের ক্লাস। রোহন বলেন, ‘‘স্যার বলছিলেন, ওখানকার পরিস্থিতি ভাল না। ওঁর শরীরটাও ঠিক নেই। দেখি কখন ক্লাস শুরু হয়।’’
ইউক্রেনের সুমিতে আটকে পড়েছিলেন ৬৯৪ জন পড়ুয়া। অপারেশন গঙ্গার মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থা করে তাদের সেখান থেকে দেশে ফেরানো হয়। সেই সুমি ইউনির্ভাসিটির ক্লাস দিন কয়েকের মধ্যে শুরু হওয়ার কথা। তবে তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান অসমের আশিক সরকার।
অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে টর্নোপিলেও। তবে ক্লাস শুরু হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না পড়ুয়া থেকে অভিভাবকরা। টর্নোপিলে মেডিক্যালের পড়ুয়া বিপাশা সাউয়ের মা সারদা সাউ চিন্তিত মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি বলেন,‘‘অনলাইনে ক্লাস তো শুরু হয়েছে, কিন্তু কোর্স শেষ করতে মেয়েকে আবার ইউক্রেনে পাঠাতে ভয় লাগবে। আমাদের দেশের সরকার যদি এখানেই কোনও ব্যবস্থা করে দেয়, মেয়ে অন্তত নিরাপদে পড়াশোনা করতে পারবে।’’ বুধবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপাশা বলেন, ‘‘দিদি নিশ্চয়ই এক জন মায়ের পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন। কোনও ব্যবস্থা নেবেন।’’