আব্দুল গনি বরাদর
আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী আব্দুল গনি বরাদরকে কি কন্দহরে পণবন্দি করে রাখা হয়েছে? তালিবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদা কি আদৌ জীবিত? একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, তালিবানের দুই নেতাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত কালই সামনে এসেছিল সরকার গড়ার আগে বরাদরের কোণঠাসা হওয়ার খবর। সম্প্রতি নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার পরে থেকেই সরকারি কোনও কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না আফগানিস্তানের বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী বরাদরকে। কিছু দিন আগে কাতারের বিদেশমন্ত্রীর আফগানিস্তান সফরের সময়ে কাবুলে তাঁর অনুপস্থিতি বিশেষ ভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বিষয়টি।
সূত্রের খবর, কাবুল প্রাসাদে সরকার গঠনের আলোচনায় ছিলেন বরাদর-সহ তালিবানের অন্য প্রভাবশালী নেতারা। ছিলেন পাকিস্তানি মদতে পুষ্ট হক্কানি সংগঠনের সদস্যরাও। সরকার গঠনের আলোচনার মধ্যে হঠাৎই বরাদরের দিকে তেড়ে যান আফগানিস্তানের মন্ত্রী খলিল-উর-রহমান হক্কানি। একের পর এক ঘুষি মারেন বরাদরকে! হক্কানিদের দিকে গুলি চালায় বরাদরের নিরাপত্তারক্ষীরা। পাল্টা গুলি চালায় হক্কানিরাও। প্রাণ হারান কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষী। সূত্রের মতে, আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের জন্য আরও অধিকার চেয়েছিলেন বরাদর। তালিবান পতাকার পাশাপাশি সর্বত্র আফগান পতাকা ওড়ানোর পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন। তবে ঠিক কী নিয়ে হক্কানিদের সঙ্গে গোলমাল শুরু হয় তা স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, গুলিবৃষ্টি ছাড়াও ধস্তাধস্তি হয় বরাদর ও হক্কানি গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে। ছড়িয়ে পড়ে আসবাবপত্র, গ্রিন টি ভরা ফ্লাস্ক।
এই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মধ্যে কারও মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই ঘটনার পর বরাদরের মৃত্যুর খবর রটে যায়। পরে যদিও জানা যায়, বরাদর নিরাপদ ভাবেই সে দিন কাবুল প্রাসাদ ছেড়ে বেরোতে পেরেছিলেন। আহত হলেও বেঁচে আছেন তিনি। তবে সে দিন কাবুল ছেড়ে কন্দহরে যাওয়ার পর থেকে আর ফেরেননি বরাদর। পরে কন্দহর থেকে একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করে বরাদর বোঝানোর চেষ্টা করেন ওই সংঘর্ষে তাঁর আহত হওয়ার খবর ভুয়ো।
আজ একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, বরাদর কন্দহরে তাঁর সমর্থনে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রবীণদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু সেই সঙ্গে সরকারি টিভি চ্যানেলে ভিডিয়ো বার্তাও প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারি টিভি এখন তালিবানের দখলে। আফগান পর্যবেক্ষকদের মতে, বরাদর যে ভাবে টিভি-তে বিবৃতি পাঠ করেছেন তা দেখে মনে হচ্ছে তাঁকে কন্দহরে পণবন্দি করে রাখা হয়েছে।
অন্য দিকে তালিবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদা আদৌ জীবিত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তালিবানের কাবুল দখলের পরে প্রায় এক মাস কেটে গেলেও তাঁকে দেখা যায়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির দাবি, তিনি জীবিত না-ও থাকতে পারেন। তাদের মতে, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানি মদতে পুষ্ট হক্কানি গোষ্ঠীর প্রভাব ঠেকানো কঠিন হবে। খলিল-উর- রহমান হক্কানি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক জেহাদের ডাক দিয়েছেন। তাঁর ভাইপো ও তালিবান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হক্কানি প্রশংসা করেছেন আত্মঘাতী জঙ্গিদের। আফগান পর্যবেক্ষকদের দাবি, কাবুল প্রাসাদে গোলমালের সময়ে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান ফৈজ় হামিদ বরাদরের বিরুদ্ধে হক্কানিদের সমর্থন করেছেন।