—ফাইল চিত্র।
বিদেশবিভুঁইয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। ঘরে ফেরা যাচ্ছে না। আটকে গিয়েছেন অতিমারি সংক্রান্ত নিয়মবিধির জাঁতাকলে। বিমানের টিকিট কেটে ফেলার পরেও যথাসময়ে করোনা পরীক্ষা না-হওয়ায় যাত্রার তারিখ বদল করে নতুন টিকিট কিনতেও বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
যেমন অক্সফোর্ডে আটকে আছেন মৈনাক বসু। সরাসরি কলকাতায় আসার কথা। কিন্তু তার জন্য কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট আবশ্যিক। কিন্তু ইংল্যান্ডে চটজলদি সেই শংসাপত্র পেতে সমস্যা হচ্ছে। সপ্তাহান্তে, ছুটির দিনে পরীক্ষা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ম করে দিয়েছে, উড়ানে ওঠার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করিয়ে ওই সার্টিফিকেট নিতেই হবে। সব জানিয়ে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষকে টুইট করেন মৈনাকবাবু।
পরে ফোনে মৈনাকবাবু বলেন, “১৬ সেপ্টেম্বর, বুধবার লন্ডন থেকে দুপুরে প্রথম উড়ান। নিয়ম অনুযায়ী আমার শনিবার পরীক্ষা করতে দেওয়ার কথা। ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস) নিখরচায় তা করাচ্ছে। কিন্তু আমরা বিদেশি বলে সেখানে পরীক্ষা করাতে পারব না। শহর লন্ডনে কিছু বেসরকারি ল্যাব শনি ও রবিবার খোলা। কিন্তু শহরের বাইরে প্রায় সব ল্যাবরেটরিই বন্ধ।” এই পরিস্থিতিতে সোমবার করোনা সংক্রান্ত পরীক্ষা করাতে দিলে রিপোর্ট আসতে বুধবার হয়ে যাবে। “আমার ১৬ তারিখের টিকিট ছিল। বাধ্য হয়ে ১৯ তারিখের টিকিট নিতে হয়েছে। হাতে অন্তত কয়েকটা দিন সময় পাওয়া যাবে,” বললেন মৈনাকবাবু।
ইংল্যান্ডে সপ্তাহান্তে এই পরীক্ষা না-হওয়ায় ১৯ তারিখের টিকিট কেটে রেখেছেন সল্টলেকের বাসিন্দা প্রবীর ও স্বাতী গুহ। বন্ধুদের কাছে বেড়াতে গিয়ে লকডাউনে আটকে যান। এর মধ্যে এমিরেটস বলেছিল, তাদের উড়ানে লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে কলকাতায় ফেরা যাবে। সেই উড়ানের টিকিট কেটে নেন দু’জনে। তখনও নিয়মমাফিক কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সার্টিফিকেট নেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি না-পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেই উড়ান বাতিল হয়ে যায়। লন্ডন থেকে স্বাতীদেবী ফোনে বললেন, “এখানে এনএইচএসের সঙ্গে যোগাযোগ করায় আমাদের বেসরকারি ল্যাবরেটরিতেই পরীক্ষা করাতে বলা হয়েছে। সোমবার পরীক্ষার জন্য লালারস দেব।”
মৈনাকবাবুর অভিযোগ, “বিদেশ থেকে কলকাতায় আসতে চাইলেই যে নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগবে, সেই নিয়মের কথা কোনও ওয়েবসাইটে পরিষ্কার করে বলা নেই। আমি তো অনেক খুঁজেও পাইনি।” তাঁর মতো অনেকেই ইংল্যান্ড থেকে কলকাতায় আসতে চান। এই সমস্যার কথা জানিয়ে তাঁরা বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ এবং বিমান মন্ত্রককে টুইট করেছেন। পরিবার নিয়ে বার্মিংহামে আটকে পড়েছেন অর্ণব সরকার। সেখান থেকে ফোনে বললেন, “আমার নাম এনএইচএসে নথিভুক্ত আছে। কিন্তু উপসর্গ না-থাকলে ওখানে পরীক্ষা হচ্ছে না। বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করাচ্ছি। আমাদের মুদ্রায় তিন জনের জন্য খরচ পড়ছে ৪৭ হাজার টাকা।”
বিমান মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া শহরে ঢুকতে না-দেওয়ার নিয়ম আছে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই। বিদেশ থেকে যাত্রীরা আসছেন দিল্লি, মুম্বই এবং দেশের অন্যান্য শহরে। সেখানে এই সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক নয়। সেই সব শহরে নেমে বাধ্যতামূলক ভাবে গৃহ-নিভৃতবাসে থাকতে হচ্ছে। জরুরি কারণে কেউ গৃহ-নিভৃতবাসে থাকতে না-চাইলে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হচ্ছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, যা করা হচ্ছে, বিমান মন্ত্রকের নিয়ম মেনেই করা হচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বক্তব্য, লন্ডন থেকে কলকাতায় আসতে চাওয়া সকলকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের করোনা-বিধির কথা জানানো হচ্ছে। বলা হয়েছে, কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া উড়ানে ওঠা যাবে না।