প্রতীকী ছবি।
হঠাৎই করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। বাসিন্দাদের মতে এই প্রথম ঠিকঠিক ভাবে লকডাউন পালিত হচ্ছে দেশ জুড়ে। দিনের অধিকাংশ সময়ে রাস্তাঘাট থাকছে শুনশান। বুধবার পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ থাকছে। তবে এর মধ্যেই সংসদের অধিবেশন বসছে বাংলাদেশে।
একেবারে জরুরি কারণ ছাড়া সমস্ত মানুষকে ঘরবন্দি থাকার আবেদন জানিয়েছিল সরকার। এই পরামর্শ অমান্য করায় বৃহস্পতিবার লকডাউনের প্রথম দিনেই বহু লোককে আটক করেছিল প্রশাসন। শুধু ঢাকাতেই সে দিন ৯৪১ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ, যাঁদের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচশো জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যত্রও। প্রশাসনের এই কঠোর মনোভাব দেখে শুক্রবার ও শনিবার মানুষ একেবারেই ঘরবন্দি থাকেন। তবে তার মধ্যেও ধরপাকড় হয়েছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর ব্যারিকেড তৈরি করেছে। রাস্তায় টহলদারিও চলছে। হাসপাতাল, ওষুধ, পুলিশ ও সংবাদ মাধ্যমের মতো ‘জরুরি’ বোর্ড দেওয়া গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়িকে ধরে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে লকডাউন শব্দটি ব্যবহার না-করে গত এপ্রিলে গণছুটি ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কয়েক মাস পরে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ধাপে ধাপে তা শিথিল করা হয়। কিন্তু ইদের পরে, এ বছর মে-র মাঝামাঝি থেকে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকে দেশ জুড়ে। গত এক সপ্তাহে প্রতি দিন কোভিডে মারা গিয়েছেন ১০০-র উপরে মানুষ। দৈনিক সংক্রমণ ৬ হাজারের বেশি। অভিযোগ, ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষার বন্দোবস্ত বিশেষ নেই। পরীক্ষা ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের এই তালিকায় ধরা হচ্ছে না।
তবে লকডাউনে মফস্সল থেকে ঢাকায় আসা শ্রমিক ও দিনমজুরদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। একে কাজ নেই, তার উপরে অনেককেই মাথা গোঁজার অস্থায়ী ঠাঁই থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পথচলতি ‘জরুরি’ স্টিকার লাগানো যানবাহন ধরে বা পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন বহু মানুষ। টহলদার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভিতরের গলিপথ দিয়ে হেঁটে তাঁরা বাড়ি পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। পুলিশও সমব্যথী হয়ে অনেককে ছেড়ে দিয়েছেন, বা কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, এমন দেখা গিয়েছে। স্তব্ধ ঢাকায় বিপন্নতার মধ্যে এমন অনেক মানবিকতার চিত্র
চোখে পড়ছে।