খুশি: অন্তর্বর্তী নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে হোয়াইট হাউসের বিশেষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স।
এখনও চলছে ভোট গণনা। হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস ও সেনেট, আমেরিকান কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই এগিয়ে রিপাবলিকানেরা। কিন্তু তারাই যে শেষ পর্যন্ত উভয় কক্ষ বা যে কোনও একটির দখল নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেন?
ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফল বলছে, সেনেটে ১০০টির মধ্যে ৪৯টি আসন এখন রিপাবলিকানদের দখলে। সেনেট দখল করতে গেলে শুধু ৫০-এই থেমে গেলে হবে না। কারণ সেনেটে ভিটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ডেমোক্র্যাট নেত্রী, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের। ফলে সেনেটে ক্ষমতায় আসতে গেলে রিপাবলিকানদের দরকার আরও অন্তত ২টি আসন। আরিজ়োনা ও নেভাডায় এখনও গণনা শেষ হয়নি। তার মধ্যে নেভাডায় ডেমোক্র্যাট এবং আরিজ়োনায় রিপাবলিকান প্রার্থী এগিয়ে রয়েছে। জটিলতা বাড়িয়ছে জর্জিয়া। কারণ এখানে কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫০ শতাংশের বেশি ভোট) পায়নি। ফলে ৬ ডিসেম্বর ফের নির্বাচন হবে জর্জিয়ায়। প্রসঙ্গত, ২০২০-র নির্বাচনে এই প্রদেশে জিতেছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা।
হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসে এখনও এগিয়ে রিপাবলিকানেরা। তাদের ঝুলিতে আপাতত ২০৯টি আসন। আরও ৯টি আসন পেলে তবেই হাউসের দখল নিতে পারবে তারা। কিন্তু এখনও যে সব প্রদেশ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল আসা বাকি রয়েছে, সেগুলি রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত নয়। ফলে হাউসের দখল নেওয়া অত সোজা হবে না বলে মানছেন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের একাংশই।
জনমত সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছিল, রিপাবলিকান দল এ বার সহজেই হাউস ও সেনেটের দখল নেবে। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, তার একটি কারণ অবশ্যই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারের সময়ে অতি সক্রিয়তা। যে সব প্রদেশে ‘নরম’ রিপাবলিকান ভোটারদের সংখ্যা বেশি, সেখানে ট্রাম্পকে না-পসন্দ অধিকাংশের। সেখানে প্রত্যাশার পারদ চড়লেও তাই জয় পাননি রিপাবলিকান প্রার্থীরা।
রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ভোট পড়ার আর একটি প্রধান কারণ— গত জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের গর্ভপাত সংক্রান্ত অত্যন্ত বিতর্কিত রায়। এই রায়ের ফলে মেয়েদের কাছ থেকে গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিয়ে সেই অধিকার তুলে দেওয়া হয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে। অর্থাৎ, প্রাদেশিক সরকার ঠিক করবে, কোন পর্যায় পর্যন্ত এক জন মহিলা গর্ভপাত করাতে পারবেন, আদৌ পারবেন কিনা। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়ে এ বার বিভিন্ন প্রদেশে ভোটাভুটি হয়েছে। অর্থাৎ ভোটারদের কাছ থেকে সরাসরি জানতে চাওয়া হয়েছে যে, তাঁরা গর্ভপাত-পন্থী কি না। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ প্রদেশই গর্ভপাতের পক্ষে রায় দিয়েছে। এবং যে সব আসনে রিপাবলিকান প্রার্থীরা গর্ভপাতের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন, সে রকম অনেক আসনেই হেরে গিয়েছেন তাঁরা।
মূল্যবৃদ্ধি আর অর্থনৈতিক মন্দা এই নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণবিষয় ছিল। অনেক রিপাবলিকান প্রার্থীই তাঁদের নির্বাচনী ইস্তাহারে গর্ভপাতের অধিকারকে অনেক পিছন দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। বুথ ফেরত সমীক্ষা কিন্তু বলছে, দেশের মোট ভোটারের ২৭ শতাংশের কাছে এটিই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষত তাঁদের কাছে, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে। এই নির্বাচনে এই বয়সের অনেকেই, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, ভোট দিয়েছেন মেয়েদের এই অধিকারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আর সেটাই বন্ধ করে দিয়েছে রিপাবলিকানদের সহজ জয়ের পথ।