প্রতীকী ছবি।
আইনের হাতে যখন ধরা পড়েছিলেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ২০। অভিযোগ ছিল ধর্ষণের মতো গুরুতর। এর জন্য কারাবাসে কেটেছে দীর্ঘ ১৬ বছর। তার পরে মুক্তি মিললেও মুক্তি দেয়নি অতীতের ছায়া। তবে প্রায় ৪০ বছর পেরিয়ে আদালত যখন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ ‘ফিরিয়ে নিল’, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি অ্যান্টনি ব্রডওয়াটার। জীবনের অর্ধেকেরও বেশি ‘ধর্ষকের’ তকমার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ চালানো ব্রডওয়াটার এখন বছর ৬১-র বৃদ্ধ। রায় শুনে চোখের জল মুছে অস্ফুটে শুধু তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘ভাবিনি যে এই দিনটি কোনও দিন দেখতে পারব...।’’
সালটা ছিল ১৯৮১। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরের এক নির্জন পার্কে ধর্ষণের শিকার হন সাইরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী অ্যালিস সেবোল্ড। ১৯৯৯ সালে একটি বইয়ের মাধ্যমে সেই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন সেবোল্ড। জনপ্রিয় হয় বইটি। তবে ওননদাগা কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি উইলিয়াম ফিটজ়প্যাট্রিকের মতে, তাঁর উপর হওয়া অত্যাচার অস্বীকার করার জায়গা নেই, তবে ব্রডওয়াটারই যে আসল অভিযুক্ত তার কোনও যথাযথ প্রমাণ আইনের কাছে নেই। ঠিক যেমনটা দাবি ব্রডওয়াটারের দুই আইনজীবী ডেভিড হ্যামন্ড এবং মেলিসা সোয়ার্টজ়েও।
‘লাকি’ নামক ওই বইয়ে সেবোল্ড লিখেছিলেন, অত্যাচারের বেশ কয়েক মাস পর মার্শাল স্ট্রিট থেকে হেঁটে যাওয়ার সময় এক দিন অভিযুক্তকে দেখেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন। ঘটনাচক্রে এই ধৃতই ছিলেন ব্রডওয়াটার। ১৬ বছর জেলে কাটিয়ে মুক্তি পেলেও ‘সেক্স অফেন্ডার’ রেজিস্ট্রিতে নাম থেকে যাওয়ায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির জায়গা, সব স্থানেই মিলেছে ঘাড় ধাক্কা। এই কালিমার ছায়া তাদের জীবনে ফেলতে চাননি বলে সন্তান না নেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেন ব্রডওয়াটার।
কিন্তু যদি তিনি নির্দোষই হন, তা হলে কেন এত ঝক্কির মধ্যে পড়লেন ব্রডওয়াটার। এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরাই। জানান, যে সময়ে ঘটনাটি ঘটে তখন ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। ফরেন্সিক প্রমাণ বলতে অভিযুক্তের একটি চুলের নমুনা ছিল তদন্তকারীদের কাছে। তবে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে তা পরীক্ষা করা ছাড়া আর কোনও ভাবে পরীক্ষার উপায় ছিল না সে কালে। যে বিজ্ঞানকে এখন ‘জাঙ্ক সায়েন্স’ বলেই অভিহিত করা হয়। বর্তমানে তা মান্যতাই হারিয়েছে। পাশাপাশি, অভিযোগকারিণী নিজেও শনাক্তকরণে ভুল করেছিলেন। নিজের বইতেই এই কথা জানিয়েছেন সেবোল্ড। তিনি লিখেছিলেন, শনাক্তকরণের সময়ে ব্রডওয়াটারের পাশে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের দু’জনকে একই রকম দেখতে ছিল। ফলে ব্রডওয়াটারের নাম বলার পরে তার এক বার মনেও হয়েছিল যে তিনি ভুল করেছেন।