ছবি—রয়টার্স।
তালিবানের আফগানিস্তান দখল করার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগের। এমন ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রভাব সারা বিশ্বেই লক্ষ করা যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তান থেকে বেরিয়েছিল সেই সময়ও ভারতে তার প্রভাব লক্ষ করা গিয়েছিল। জম্মু কাশ্মীর বলুন কিংবা পঞ্জাব, সবত্রই প্রভাব পড়েছিল। এবং সেটাই স্বাভাবিক। এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, পাকিস্তান নিজের পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত নিয়ে একেবারে চিন্তামুক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, সঙ্গে আফগান সরকার এতদিন ধরে যে সম্পদ তৈরি করেছে, আমেরিকাও তাতে অনেক সাহায্য করেছিল। সেইসব কিছুই তালিবান এখন ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া ও আমেরিকার আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার মধ্যে যদি তুলনা করেন। তাহলে বলব পরিস্থিতি এখন বেশি জটিল।
আমেরিকা তাড়াহুড়ো করে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করল। বিশ্ব মানচিত্রে যেভাবে চিন ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তার প্রভাবও এমন সময় পৃথক করে দেখা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে ‘ডেডলক’ পরিস্থিতি হয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তবে তা খুবই সামান্য। সীমান্তে সেনাবাহিনীর নিয়োগ বাড়ছে এটা অবশ্যই ভাল দিক। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দু’পক্ষের সেনাবাহিনী সরানোও হচ্ছে। এমন সময় পাকিস্তানের দিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ, পাকিস্তানের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। আর সেদেশের রাজনীতি পুরোপুরি সেনাবাহিনীর কুক্ষিগত। তালিবানের আফগানিস্তান দখল কিন্তু এই সমস্ত বিষয়গুলিকে প্রভাবিত করবে।
ছবি—রয়টার্স।
কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল তেহেরিক-ই-তালিবান একটি সন্ত্রাসবাদী দলের সঙ্গে সরাসরি হাত মিলিয়েছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে রয়েছে বলেই আমি মনে করি। আবার চিন পাকিস্তানের মধ্যেই যে ইকনমিক করিডোর তৈরি করেছে, ওখানেও আমাদের নজর রাখতে হবে। আর পাকিস্তানে যে বালুচিস্তানের সমস্যা রয়েছে, সেদিকেও রাজনৈতিক ভাবে নজর দেওয়া জরুরি। সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো বিষয়টি খুব খুব জটিল আকার ধারণ করেছে। কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, সত্যি বলা কঠিন হয়ে গিয়েছে। আজ যে ভাবে অতি দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু হয়ে গেল, তাতে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতেই হবে। কারণ ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি শুধু উদ্বেগেরই নয়, গভীর উদ্বেগের।
দেখলাম তালিবানের মুখপাত্র শান্তির কথা বলছেন। জানি না কতটা বিশ্বাসযোগ্য হবে সেটা। সংবাদমাধ্যমে শান্তির কথা বলা আর তা বজায় রাখা এক নয়। তাই ভারত নিশ্চয়ই এমন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।