(বাঁ দিকে) বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংসদ সদস্য পদে থাকা একাধিক ব্যক্তির আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। মোট ৭৭৮টি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’। তার মধ্যে অধিকাংশই দেশের প্রাক্তন সংসদ সদস্যদের। ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলি জমা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন। সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না-দেওয়ার অভিযোগে লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। হাসিনার সরকারে যাঁরা উচ্চ পদে ছিলেন, তাঁদের অনেকেরই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে।
লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর ওই ৭৭৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ‘অবৈধ’ হয়ে গিয়েছে। সেগুলি উদ্ধারের তোড়জোড় শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। মূলত পাবনা, চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় এই অস্ত্রগুলি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অভিযোগ, হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন থাকাকালীন বেআইনি ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতেন রাজনৈতিক নেতা এবং উচ্চপদস্থ কর্তারা। ভয় দেখানোর জন্য তা ব্যবহার করা হত বলেও অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কেবল আত্মরক্ষার্থেই অস্ত্র ব্যবহার করা যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাঁদের অস্ত্র ফেরত দিতে বলে ইউনূস সরকার। কিছু দিন আগে আমেরিকার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছিলেন হাসিনা। সেখানে তিনি ইউনূসকে বাংলাদেশে গণহত্যার চক্রান্তকারী বলে উল্লেখ করেছিলেন। হাসিনার ওই মন্তব্যকে ‘বিদ্বেষমূলক’ বলে জানিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সমাজমাধ্যম এবং গণমাধ্যম থেকে হাসিনার মন্তব্য সরিয়ে দিতেও বলা হয়েছে।
অন্য দিকে, সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বিক্ষোভ চলাকালীন আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে ইউনূসের প্রশাসন। ধৃতের নাম রিপন দাস। অভিযোগ, ঘটনাস্থলের ভিডিয়ো ফুটেজে রিপনকে বঁটি হাতে দেখা গিয়েছিল। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খারিজ হয়ে গিয়েছে তাঁর জামিনের আবেদনও। আদালতে আইনজীবী না পাওয়ায় চিন্ময়কৃষ্ণের মামলা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা পথে নামেন। চট্টগ্রাম এবং রংপুরের মতো এলাকায় বিক্ষোভ হয়। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পরের দিনই চট্টগ্রামের বিক্ষোভে হিংসা ছড়ায়। সইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীর মৃত্যু হয় তাতে। সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা অধিকাংশই সংখ্যালঘু।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সমস্যার কথা ঘরোয়া বৈঠকে মেনে নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য পরামর্শ চান। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ত্রিপুরার আগরতলায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশ মিশনে ঢুকে পড়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তার পর বৃহস্পতিবারই কলকাতা এবং আগরতলা থেকে কূটনৈতিক কর্তাদের ডেকে পাঠান ইউনূস। আগরতলার ঘটনার প্রতিবাদে এবং ভারত-বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দাবিতে বরিশালে পাল্টা বিক্ষোভ হয়েছে।