যুদ্ধবিরোধী মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে রাশিয়ায়। — ফাইল ছবি।
ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার নাম নেই। এই প্রেক্ষিতে জনসমর্থনে ধস নামছে পুতিনের। ক্রেমলিনের গোপন সমীক্ষা রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে এমনই দাবি করেছে স্কাই নিউজ নামের একটি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যম। গত জুলাইয়ের সমীক্ষায় ৫৭ শতাংশ মানুষ ছিলেন যুদ্ধের পক্ষে। এখন তা নেমে এসেছে ২৫ শতাংশে। স্বভাবতই চিন্তা বাড়ছে মস্কোর কর্তাদের।
যে ইউক্রেন যুদ্ধ জনসমর্থনে জোয়ার এনেছিল, তাই কি এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের? এই প্রশ্ন উঠছে কারণ ক্রেমলিনের একটি গোপন সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, রাতারাতি জনসমর্থন উল্টে যাচ্ছে। যাঁরা এত দিন যুদ্ধের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন, ভেসে গিয়েছিলেন রাশিয়ার জাতীয়তাবাদের জোয়ারে, তাঁরাই এখন যুদ্ধের বিরোধিতা করছেন।
স্কাই নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ এখনও যুদ্ধের পক্ষে রয়েছেন। গত জুলাইয়ে যে সংখ্যাটা ছিল ৫৭ শতাংশ। একই সময়ের মধ্যে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন ৫৫ শতাংশ মানুষ। গত জুলাইয়ে যে সংখ্যা ছিল ৩২ শতাংশ।
কিন্তু কেন আচমকা এমন পতন? সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ এ বার সরাসরি রাশিয়ানদের ঘরে ঢুকে পড়েছে। বাড়ির ছেলেদের বাধ্যতামূলক ভাবে যুদ্ধে যাওয়ার ফরমান জারি হয়েছে। গোটা বিশ্বের প্রায় সমস্ত বড় বড় সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়েছে রাশিয়া থেকে। ফলে এক দিকে কাজের অভাব, অন্য দিকে বাড়ির ছেলেদের নিয়ে টানাটানি, এই দু’য়ের যোগফল পুতিনের জনসমর্থনে ধসের স্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন তাঁরা। পরিস্থিতির সঙ্গে ওয়াকিবহাল মহল আগামী দিনে মস্কোর পথে এ নিয়ে বিক্ষোভ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন।
সমাজবিজ্ঞানী গ্রিগোরি ইউডিন বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি যেমন তাতে আগামী দিনে রাজপথে বিক্ষোভ আছড়ে পড়তেই পারে। আমার মনে হয়, সেই দিনের জন্য আমাদের খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। আর বাস্তবে তা যদি সত্যিই হয়, তা হলে ক্রেমলিনের কর্তাদের কপালের ভাঁজ চওড়া হতে বাধ্য।’’
এ দিকে ইউক্রেনের বাসিন্দাদের মনোবল ভাঙার কোনও লক্ষণ এখনও পর্যন্ত নেই। স্বল্প ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েই তাঁরা প্রবল শক্তিধর রাশিয়ার আগ্রাসী হামলার মোকাবিলা করেই চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর আগ্রহ হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘরে-বাইরে চাপ ক্রমশ বাড়ছে— কী করবেন পুতিন, এখন সেটাই দেখার।