আশ্বাস করবিনদের নির্বাচনী ইস্তাহারে

উপনিবেশ নিয়ে বহু অস্বস্তি, উত্তর খুঁজতে প্রস্তুত লেবার

ব্রিটিশ স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমেও ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস পর্যালোচনা করার দাবি উঠছে অনেক দিন ধরে। ২০১৬ সালের একটি জনসমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা নিয়ে রীতিমতো গর্ববোধ করেন ৪৪ শতাংশ ব্রিটেনবাসী।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

অনাহারে: পঞ্চাশের মন্বন্তরে (ছবিতে) চার্চিলের ভূমিকা বিচার করবে লেবার পার্টি। সোশ্যাল মিডিয়া

পঞ্চাশের মন্বন্তরে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকার মতো বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত লেবার পার্টি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা ও তার প্রভাব নিয়ে অন্বেষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে লেবারদের নির্বাচনী ইস্তাহার। সেখানেই এই সব ‘প্রতিশ্রুতি’ থাকছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ক্ষমতায় এলে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাওয়াও হবে বলে জানানো হবে ইস্তাহারে।

Advertisement

কী থাকছে লেবারদের নির্বাচনী ইস্তাহারে?

জানা গিয়েছে, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ‘উত্তরাধিকার’ ও উপনিবেশগুলিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ‘অনুসন্ধান’ চালানোর আশ্বাস দিয়েছে লেবার। এই ধরনের ‘অনুসন্ধানের’ ফলে ব্রিটিশ ইতিহাস নতুন ভাবে লেখা হতে পারে বলে মত কূটনাতিক ও ইতিহাসবিদদের। বহু দিন ধরেই বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন এই ধরনের ইতিহাস পর্যালোচনার দাবি তুলছিল। কিন্তু ব্রিটেনের কোনও সরকারই সেই দাবি মেনে নেয়নি।

Advertisement

এ বছর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের একশো বছর পূর্ণ হল। নানা মহল থেকে বারবার ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল, তারা যাতে সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারি ভাবে ক্ষমা চায়। টেরেসা মে-র কনজ়ারভেটিভ সরকার সেই হত্যালীলাকে ‘ব্রিটিশ ইতিহাসে কালো দাগ’ বললেও সরকারি ভাবে ক্ষমা চাননি। তার বদলে ভারত সফরে এসে ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ জালিয়ানওয়ালা বাগ সৌধের সামনে সাষ্টাঙ্গে শুয়ে পড়ে মার্জনা ভিক্ষা করেন। কূটনৈতিক মহলে তখন গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, ক্ষতিপূরণ-বিতর্ক এড়াতেই সরকারি ভাবে ক্ষমা চাইলেন না প্রধানমন্ত্রী মে। লেবারের ইস্তাহারে ‘ইতিহাস পর্যালোচনা’র আশ্বাস থাকলেও অবশ্য কোনও ক্ষতিপূরণের উল্লেখ থাকছে না।

ব্রিটিশ স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমেও ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস পর্যালোচনা করার দাবি উঠছে অনেক দিন ধরে। ২০১৬ সালের একটি জনসমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা নিয়ে রীতিমতো গর্ববোধ করেন ৪৪ শতাংশ ব্রিটেনবাসী। মাত্র ২১ শতাংশ ব্রিটিশ তাঁদের ঔপনিবেশিক অতীত নিয়ে লজ্জিত। গত বছরেই করবিন বলেছিলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে এ দেশের স্কুলে ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশ ও দাসপ্রথা’ নিয়ে যে ভাবে পড়ানো হয়, তা ঢেলে সাজাবেন।

২০১৮-এ ৭৫ বছর পার করল পঞ্চাশের মন্বন্তর (১৯৪৩)। সেই মড়কে মারা গিয়েছিলেন দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ। অথচ সে বছর ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ‘উদ্বৃত্ত’ খাদ্যশস্য রফতানি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। এই মন্বন্তর হওয়ার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকার নিন্দা করা হয়। সেই বিষয়টি নিয়েও সরকারি স্তরে আলোচনা ও বিতর্কের আশ্বাস দিয়েছেন করবিন।

ভারত ছাড়া বিভিন্ন দেশ নিয়েও সম্ভাব্য বিদেশনীতির উল্লেখ রয়েছে ইস্তাহারে। প্যালেস্তাইনকে তাঁরা স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চান বলে জানিয়েছেন লেবার নেতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement