প্রস্তর যুগে এমন এক রহস্যময় ঘটনা ঘটেছিল, যার সমাধান করতে অন্তত পাঁচ হাজার বছর লেগে গেল বিজ্ঞানীদের! যে গ্রামটিতে এই ঘটনা, তা বর্তমানে স্লোভাকিয়ায়।
পাঁচ হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা এক ‘ঘুরন্ত’ গ্রামের খোঁজ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। একটা আস্ত গ্রাম এমন ভাবেই তৈরি হয়েছিল, যা দেখলে মনে হবে যেন তা ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘুরে চলেছে। সেই ঘুরন্ত গ্রামের রহস্যেরই সমাধান হল।
সম্প্রতি ‘প্লস ওয়ান’ নামে এক পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে। কেন এ ভাবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘোরার মতো গড়ে উঠেছিল গ্রামটি, তার প্রকৃত কারণ প্রকাশিত হয় ওই পত্রিকায়।
বর্তমান স্লোভাকিয়ায় অবস্থিত ভ্রাবেলে প্রস্তর যুগের ওই গ্রামের সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। গ্রামটিতে অদ্ভুত একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন তাঁরা। দেখেন যে, গ্রামের বাড়িগুলি প্রতিটিই একটু একটু করে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রথম বাড়ির পর দ্বিতীয় যে বাড়ি গড়ে তোলা হয়েছিল, সেটি প্রথম বাড়ির সমান্তরাল ভাবে না করে একটু বাঁ দিক ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছিল। ঠিক তেমনই তৃতীয় বাড়ি আবার দ্বিতীয় বাড়ির থেকেও একটু বাঁ দিক ঘেঁষা। এ ভাবেই গ্রামের সমস্ত বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল।
কেন এ রকম ভাবে বাড়িগুলি বানানো হয়েছিল, তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নানা মতবাদ সামনে উঠে এসেছে। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন, ডান দিক দিয়ে জোরে বয়ে আসা হাওয়ার গতি থেকে বাঁচতেই এ ভাবে সামান্য বাঁ দিক ঘেঁষে বানানো হয়েছিল বাড়িগুলি।
অনেকের আবার ধারণা ছিল, সূর্যের আলো পেতেই প্রথম বাড়ির ঠিক পিছনে না বানিয়ে খানিক বাঁ দিকে দ্বিতীয় বাড়ি বানানো হয়েছিল।
প্রকৃত কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রকৃত কারণ বোঝানোর জন্য ‘সিউডোনেগলেক্ট’ শব্দটি ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। জীববিদ্যায় ব্যবহৃত একটি শব্দ ‘সিউডোনেগলেক্ট’।
বিজ্ঞানীরা জানান, বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। ব্যাপার কী? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বেশিরভাগ মানুষকে কোনও লাইনের মাঝখান চিহ্নিত করতে দিলে, তাঁরা যে বিন্দু নির্দিষ্ট করে থাকেন, সেটি সামান্য বাঁ দিক ঘেঁষেই হয়ে থাকে।
একটি অনুভূমিক রেখা এঁকে কয়েক জনকে তার মাঝখান চিহ্নিত করতে দিয়ে এই বিষয়টি পর্যালোচনাও করেছেন বিজ্ঞানীরা। সবটাই আসলে মানুষের মস্তিষ্কের খেল।
এই বিষয়টিই নাকি ঘটেছিল প্রস্তর যুগে গড়ে ওঠা গ্রামে। প্রথম বাড়ির সঙ্গে ঠিক পিছনে সমান্তরাল ভাবে দ্বিতীয় বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে মাঝখান স্থির করতে পারা যায়নি। সামান্য বাঁ দিক ঘেঁষে তৈরি হয় দ্বিতীয় বাড়ি। একই ঘটনা ঘটেছিল তৃতীয়, চতুর্থ এবং পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা বাড়িগুলিতে। পরবর্তীকালে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যায় আর পড়তে হয় না।