বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছোট-বড় মাটির স্তূপ। সযত্নে কেউ যেন সেগুলো সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে। যেমন দেখতে হয় মানুষের তৈরি কবরস্থান, এটাও হুবহু তেমনই।
তবে কি বিস্তৃত এই এলাকা জুড়ে মাটির নীচে কবর দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে! এই স্থান নজরে আসার পড়েই চমকে উঠেছিল বিশ্ব।
১৮৪১ সালে প্রথম এই স্থান নজরে আসে মার্কিন এক্সপ্লোরার চার্লস উইলকিসের। দক্ষিণ-পশ্চিম ওয়াশিংটনের বিস্তীর্ণ এলাকায় এমন সাজানো বহু মাটির স্তূপ দেখেছিলেন তিনি।
তার কোনওটা গোল, কোনওটা একটু চ্যাপ্টা, কোনওটা আবার ডিম্বাকার। তিন মিটার থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত চওড়া এবং ৩০ সেন্টিমিটার থেকে দু’মিটার পর্যন্ত এগুলোর উচ্চতা হয়ে থাকে।
এগুলোকে বলা হয় মিমা মাউন্ডস। এই মুহূর্তে ওয়াশিংটনের মিমা মাউন্ডস ন্যাচরাল এরিয়া প্রিজার্ভ নামে সংরক্ষিত অঞ্চলে এগুলোকে দেখা যায়।
মিমা মাউন্ড বা মাটির এই স্তূপগুলো কী ভাবে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে এখনও নানা গবেষণা চলছে। ১৮৪১ সালের পর প্রথম মনে করা হয়েছিল, এগুলো এক একটা কবর।
এর নীচে কবর দেওয়া হয়েছে মানুষদের। তারপর আশেপাশের মাটি হাত দিয়ে উঁচু করে দেওয়ার ফলেই এমন স্তূপের সৃষ্টি হয়েছে।
সত্যিই কী এর নীচে শুয়ে রয়েছে মানুষ! সে রহস্য সমাধানে পরবর্তীকালে কতগুলো স্তূপ খুঁড়ে ফেলেন বিজ্ঞানীরা। কী দেখলেন ভিতরে?
আশ্চর্যের বিষয়, কোনও স্তূপের নীচেই মানুষের কোনও অবশিষ্ট মেলেনি। বদলে মিলেছে আলগা মাটি আর পচনধরা গাছের অংশ। তাহলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কে সাজিয়ে দিল এমন স্তূপ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করলেন বিজ্ঞানীরা।
এর সৃষ্টি নিয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে। কখনও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বায়ুপ্রবাহের জেরেই এমন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়েছে। মরু অঞ্চলে যেমন বায়ু্প্রবাহের জন্য নানা ভূমিরূপ তৈরি হয়। এখানেও সে রকমই হয়েছে।
মার্কিন ভূবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রিউ বার্গের মতে, খুব বড় ভূমিকম্পের কারণে এরকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
তবে সম্প্রতি এ সমস্ত তত্ত্বকে পিছনে ফেলে ২০১৭ সালে ‘নেচার’ পত্রিকায় সম্পূর্ণ অন্য তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। উইপোকা, পিঁপড়ে বা ইঁদুরের কাজ এটা। তবে প্রকাশিত এই তত্ত্বও এখনও পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হয়নি। মিমা মাউন্ডস নিয়ে রহস্যের কিনারাও এখনও হয়ে ওঠেনি তাই।