কথায় রয়েছে কোনও চাষি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে সে দেশের কৃষিতে নাকি আমূল পরিবর্তন আসে। বলাই বাহুল্য কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার হলে সে দেশের খেলাধুলোয় উন্নতি হবে, এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক।
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। তার পরই সে দেশের খেলাধূলার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ক্রিকেটের উন্নয়ন হবে বলে মনে করেছিল বিশ্ব।
স্টেডিয়াম নির্মাণ, ভাল প্রশিক্ষক নিয়োগ, খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য পরিকাঠামোর উন্নতি ইত্যাদি তাঁর কাছে প্রাধান্য পাবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব উল্টো কথাই বলছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা স্টেডিয়াম অযত্নের কারণে আপাতত চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে।
ক্রিকেট ব্যাটে বল লাগার শব্দ নেই, গ্যালারি থেকে দর্শকদের চিৎকার নেই। উপরন্তু লঙ্কা থেকে লাউ— সবই ফলে রয়েছে সেখানে। বাইরে থেকে দেখে যা স্টেডিয়াম, ভিতরে প্রবেশের পর তা কোনও ভাবেই বোঝা সম্ভব নয়। বরং মনে হবে যেন কোনও চাষের জমি।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের খানেওয়াল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ঘটনা। এক সময় স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে আবৃত মাঠ এখন উর্বর চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ২০০৯ সালে পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের উপরে জঙ্গি হামলার কারণে দীর্ঘ সময় পাকিস্তানের মাটিতে কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ সংঘটিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। পাকিস্তানের মাটিতে ছোট-বড় অনেক ম্যাচই হয়েছে।
পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া স্তরের ম্যাচের জন্য বিপুল খরচ করে বেশ কয়েকটি স্টেডিয়ামও বানানো হয়েছে। এক সময়ে সে সমস্ত স্টেডিয়ামে রমরমিয়ে খেলা দেখতে ভিড় জমাতেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
কিন্তু করোনা আবহে বেশির ভাগ স্টেডিয়ামই বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। তার মধ্যেই একটি হল এই খানেওয়াল স্টেডিয়াম। অন্যান্য স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ হলেও খানেওয়াল সেই তালিকা থেকে সম্পূর্ণ বাদ চলে যায়।
দীর্ঘ সময় কোনওরকম রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এমনিতেই মাঠ ঘাসে ভরে গিয়েছিল। তার উপর কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় আশেপাশের বাসিন্দারা একে একে এই মাঠেই চাষাবাদ করতেও শুরু করে দেন।
সম্প্রতি স্টেডিয়ামের একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেখে আঁতকে উঠতে হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, মাঠের মধ্যেই গজিয়ে উঠেছে লঙ্কা, লাউয়ের গাছ, ফলে রয়েছে ফসলও। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বানানো স্টেডিয়ামের এই হাল কেন হল সে বিষয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্টেডিয়ামের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা।