বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। ফাইল চিত্র।
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সূক্ষ্ম একটি চাল এবং মদেশীয় দল জনতা সমাজবাদী পার্টি-র একাংশ বেঁকে বসায় এই মুহূর্তে নেপালি কংগ্রেস নেতা শেরবাহাদুর দেউবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া হচ্ছে না। এ দিন বিকেলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে নেপালি কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, যথেষ্ট সমর্থন আদায় সম্ভব না-হওয়ায় রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারীর কাছে সরকার গড়ার দাবি জানাতে যাবেন না দেউবা। মদেশীয় দলটির বেঁকে বসা অংশের নেতা মহন্ত ঠাকুর ১৫ জন সাংসদ নিয়ে ওলিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সরকারই ফের ক্ষমতায় এল।
এ দিন নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও নেতা সরকার গড়ার দাবি জানাতে না-আসায় সংবিধানের ৭৬(৩) ধারায় বৃহত্তম দলের নেতা হিসেবে ওলিকে ফের সরকার গড়ার নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি। আগামী কাল তাঁকে শপথবাক্য পড়াবেন রাষ্ট্রপতি ভাণ্ডারী। এক মাসের মধ্যে সংসদে আস্থাভোট নিয়ে গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে তাঁকে। সে কাজে ওলি ব্যর্থ হলে সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী নির্বাচন ছাড়া গতি থাকবে না।
সোমবার ওলির সরকার আস্থাভোটে পরাজিত হওয়ার পরে রাষ্ট্রপতি ভাণ্ডারী সংবিধানের ৭৬ (২) ধারায় সরকার গড়ার দাবি জানানোর জন্য সব দলকে বৃহস্পতিবার রাত ন’টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ডের নেতৃত্বে মাওবাদী সেন্টার ওলিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে নেপালি কংগ্রেসের নেতা শেরবাহাদুর দেউবাকে সমর্থনে এগিয়ে আসে। কিন্তু ২৭১ আসনের সংসদে গরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১৩৬ জন সাংসদের সমর্থন দরকার, সেখানে প্রচণ্ডের মাওবাদী সেন্টার (৪৯) ও নেপালি কংগ্রেস (৬১) মিলিয়ে ১১০ জন সাংসদ রয়েছেন। তরাইয়ে মদেশীয় সম্প্রদায়ের দল জনতা সমাজবাদী পার্টি ৩২ জন সাংসদকে নিয়ে দেউবাকে সমর্থন জানালে তাঁর জয় নিশ্চিত বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু জনতা সমাজবাদী পার্টির দুই চেয়ারম্যানের অন্যতম মহন্ত ঠাকুর ১৫ সাংসদ নিয়ে ওলির পাশে দাঁড়িয়ে যান।
এ দিকে নিজের দল ‘নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি’-তে মাধবকুমার নেপাল ও ঝালনাথ খানালের নেতৃত্বে বিদ্রোহী অংশের উদ্দেশে ওলি বার্তা দেন— ঝগড়াঝাঁটি করে কী লাভ, সেই সুযোগে যদি অন্যরা সরকারই গড়ে ফেলে? দলবিরোধী কাজের জন্য মাধব নেপাল ও অন্য তিন নেতাকে সাসপেন্ড করেছিলেন দলের চেয়ারম্যান ওলি। এ দিন সেই শাস্তি তিনি রদ করে দেন। এর পরে দলে ২৮ সাংসদের বিদ্রোহী অংশ ওলির সরকার ফেলার জন্য গণইস্তফার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে আসার ইঙ্গিত দেয়। তার পরে দেউবার আর সরকার গড়ার কোনও আশা থাকে না। রাত ন’টায় রাষ্ট্রপতির নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে নেপালি কংগ্রেস জানিয়ে দেয়, দেউবা সরকার গড়ার দাবি জানাতে যাচ্ছেন না।
সংসদে আস্থাভোটে জিতে গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ওলিকে নির্ভর করতে হবে তরাইয়ের ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয়দের দল জনতা সমাজবাদী পার্টির মহন্ত ঠাকুরের উপরে। তিনিই এখন ‘কিং মেকার’। ঐতিহাসিক ভাবে নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকায় দেউবা সরকারের ক্ষমতায় আসাটা হয়তো বিদেশ মন্ত্রকের কাছে কাঙ্ক্ষিত ছিল। তবে প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নয় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। চিনপন্থী ওলির এ ভাবে ডানা ছাঁটা যাওয়ায় দিল্লির অখুশি হওয়া উচিত নয়। বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র জানান, নেপালে ওলি সরকারের সময়েও পরিকাঠামোগত উন্নয়নে বিপুল সাহায্য করেছে ভারত। এই মুহূর্তে করোনার প্রতিষেধক রফতানি বন্ধ থাকলেও সে দেশে টিকা পাঠিয়েছে দিল্লি। সেই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।