ফাইল চিত্র।
গত ফেব্রুয়ারিতে মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জুন্টার বাহিনী হাজারখানেক গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীকে নির্বিচারে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। জুন্টা সরকার বেশির ভাগ সময়ে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও কখনও কখনও স্বীকার করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কিছু প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়েছে বটে, তবে সংখ্যাটা কখনওই শ’খানেকের বেশি নয়। এ বার প্রথম সারির এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, গত জুলাই মাসে মধ্য মায়ানমারের সাগাইং প্রদেশের কানি শহর সংলগ্ন অন্তত চারটি গ্রামে গণহত্যা চালিয়েছিল সেনা। যার ফলে শুধুমাত্র ওই চার এলাকাতেই মৃত্যু হয়েছিল ৪০ জনের। নিহতদের মধ্যে ছিল ১৭ বছরের কিশোরও।
একের পর এক আন্দোলনকারীকে মেরে অগভীর গর্ত খুঁড়ে তাঁদের দেহ কবর দিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি ওই সংবাদমাধ্যমের। কানি ও তার আশপাশের এলাকার কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান ও মোবাইলে তোলা ভিডিয়ো ফুটেজ তাদের হাতে রয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। তাদের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সেই সময়ে মায়ানমারের সাধারণ মানুষই ছোট ছোট সশস্ত্র বাহিনী গড়ে জুন্টার বিরুদ্ধে লড়ছিল। দাবি জানাচ্ছিল, দেশের নির্বাচিত সরকারকে ফিরিয়ে আনার। বেছে বেছে ওই দলগুলির সদস্যকেই তখন নিশানা করে সেনা।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইয়েন নামে একটি গ্রামে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষকে মারা হয়। সেখানে ১৪টি কবরের খোঁজ মিলেছে। এক মহিলা প্রত্যক্ষদর্শীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ওরা এত অত্যাচার করছিল যে আমরা তাকিয়ে দেখতে পারছিলাম না। কাঁদছিলাম। সেনা বলল কাঁদছ কেন, তোমার কি স্বামী আছে এদের মধ্যে? তা হলে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা কর।’’ সেই দলে মহিলার স্বামী না থাকলেও ছিলেন তাঁর ভাই, ভাইপো ও জামাইবাবু। আর একটি গ্রাম, জ়ি বিন দুইনেও মিলেছে ১২টি ক্ষতবিক্ষত দেহ। শিশু, প্রতিবন্ধীর দেহও মিলেছে। সেখানে গাছে বেঁধেও মেরে ফেলা হয়েছে এক বৃদ্ধকে। নিহতদের এক আত্মীয়া বলেন, ‘‘সেনা বলেছিল একটা কথাও বলবে না। আমরা খুব ক্লান্ত। বেশি কথা বললে তোমাকেও মেরে ফেলব।’’
সেনার মুখপাত্র জ়াও মিন তুনকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি গোটা বিষয়টি অস্বীকার তো করেনইনি, উল্টে বলেছেন, ‘‘এ রকম হতেই পারে। যদি ওরা আমাদের শত্রু মনে করে আক্রমণ করে, আমাদের তো প্রতিরোধ করতেই হবে।’’