কামাল লোহানী।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু হল বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানীর। তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের প্রধান হিসেবে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ের খবর তিনিই প্রথম শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষকে। ৮৬ বছরের কামাল লোহানীকে অসুস্থ অবস্থায় পরশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সকাল দশটায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তারেরা। মৃত্যুর পরে দেহদানের অঙ্গীকার করে গেলেও করোনা পজ়িটিভ হওয়ায় তা করা যায়নি। জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খান সনপাড়া গ্রামে এ দিনই তাঁর শেষকৃত্য হয়।
মৌলানা ভাসানির শিষ্য হিসেবে বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯ বছর বয়সে প্রথম গ্রেফতার হন কামাল লোহানী। ১৯৫৪-তে মুক্তি পেলেও পরের বছরেই ফের গ্রেফতার হন। এই সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে একই কারাকক্ষে থাকতে হয় তাঁকে। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষ পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে যে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ শুরু হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন লোহানী এবং সনজিদা খাতুন।
১৯৬২-তে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক হন। কলকাতার সঙ্গে লোহানীর ছিল নিবিড় যোগাযোগ। ১৯৭১-এর আগে থিয়েটার রোডে এখনকার অরবিন্দ ভবনে প্রবাসী সরকারের দফতরেই একটি ঘরে বসবাস করতেন কামাল লোহানী। পার্ক সার্কাসে ছিল তাঁর মামার বাড়ি।
১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন আদ্যন্ত রাজনৈতিক একটি বামপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্রান্তি। মৃত্যুকালেও তিনি ছিলেন উদীচী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ছিলেন দু’দফায়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ বেতারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও দৈনিক মিল্লাত, আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক প্রভাত ও দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন লোহানী। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান একুশে পদক পাওয়া কামাল লোহানীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আব্দুল হামিদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “এক জন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অসাধারণ যোদ্ধাকে হারালাম।”