ইজরায়েলের রাজধানী জেরুসালেম, ঘোষণা ট্রাম্পের। ছবি: সংগৃহীত।
কথা রাখতে গিয়ে আরও এক বার পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে কাঁপন ধরিয়ে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়েছে আমেরিকা। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘বাস্তবকে স্বীকার করাই ভালো।’’
বছর খানেক আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হয়ে এলে জেরুসালেমকেই ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। তেল আভিভ থেকে সরিয়ে নেবেন মার্কিন দূতাবাসও। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, দূতাবাস স্থানান্তরের আগেই আজ সেই ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ফুঁসছে প্যালেস্তাইন। ক্ষোভ জমছে গোটা আরব দুনিয়ায়। এমনকী আমেরিকার ‘বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবও বলছে, ‘‘প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্ত পুরো মুসলিম বিশ্বের কাছেই এক চরম উস্কানি।’’ যুযুধান দু’দেশের মধ্যে নতুন করে শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর ডাক দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জেরুসালেমে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অবশ্য আজ দিনভর মুখে কুলুপ এঁটেই রইলেন।
আরও পড়ুন: জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশদের ক্ষমা চাওয়া উচিত, মত সাদিকের
জেরুসালেম আসলে কার? দশকের পর দশক ধরে এই প্রশ্নেই উত্তাল হয়ে রয়েছে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের সম্পর্ক। প্রাচীন এই শহরটি একই সঙ্গে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পবিত্রভূমি। অথচ অভিযোগ, ১৯৮০-তে জবরদখল করেই শহরটিকে নিজেদের রাজধানী বলে ঘোষণা করে ইজরায়েল। তারও আগে থেকে চলছিল একের পর এক ‘অবৈধ’ ইহুদি বসতি গড়ার কাজ। প্যালেস্তাইন যা কখনওই মেনে নেয়নি। এত দিন জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে মান্যতা দেয়নি বাকি দুনিয়াও।
ট্রাম্পের তাই এমন উল্টো পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত, পশ্চিম এশিয়ার শান্তি প্রক্রিয়াকে একেবারে খাদের ধারে এনে দাঁড় করাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে কূটনীতিক মহল। তা হলে কি ফের রক্তে ভাসবে গাজা ও পশ্চিম ভূখণ্ড? হোয়াইট হাউসের দাবি, ইজরায়েলকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া নয়, প্রেসিডেন্ট ঐতিহাসিক বাস্তবটাকেই স্বীকৃতি দিলেন মাত্র। মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসনও বলেছেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রের প্রেসি়ডেন্ট এখনও আগের মতোই দায়বদ্ধ।’’ টিলারসন জানিয়েছেন, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কাল ট্রাম্প নিজে থেকেই ফোন করে কথা বলেছেন প্যালেস্তাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে।
দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি কেউই। ফলে অস্বস্তি থাকছেই। ইরান, তুরস্ক, ফ্রান্স, জর্ডন, মরক্কো ও মিশরের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ফোন কথা বলেছেন আব্বাস। পাশে থাকার ব্যাপারে তাঁদের কাছ থেকে সাড়াও পেয়েছেন। আমেরিকার এই ‘চক্রান্ত’ মেনে নেওয়া হবে না বলে তোপ দেগেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এর প্রতিবাদে গোটা মুসলিম দুনিয়াকে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোগান আগামী ১৩ ডিসেম্বর থেকে ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন’-এর শীর্ষ বৈঠক ডেকেছেন। ট্রাম্পকে এ ধরনের ঘোষণা না-করার অনুরোধ জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও।
ট্রাম্প যে এমন একটা কিছু করতে পারেন, কয়েক দিন ধরেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। অভিন্ন জেরুসালেমকে চিরদিনই নিজেদের রাজধানী বলে দাবি করে এসেছে ইজরায়েল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে ইজরায়েল যে ভাবে পূর্ব জেরুসালেমের দখল নেয়, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্যালেস্তাইনের। সেখানে ইহুদিদের কয়েক ডজন ‘অবৈধ’ বসতি সত্ত্বেও, এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ প্যালেস্তাইনিরাই। বরাবর তারা বলে আসছে, পূর্ব জেরুসালেমই হবে স্বাধীন প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্রের রাজধানী। তাদের আশঙ্কা, গোটা জেরুসালেমটাই ইজরায়েলের নামে করে দিয়ে আমেরিকা এখন স্বাধীন প্যালেস্তাইনের সম্ভাবনাটাই নস্যাৎ করে দিতে চাইছে।
কিন্তু দূতাবাস সরানোর কী হবে? হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, ট্রাম্প আজ হয়তো এ নিয়েও নির্দেশ জারি করতে পারেন। ১৯৯৩ সালে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, তাকে সম্মান জানাতেই এত দিন সব দেশ তেল আভিভেই নিজেদের দূতাবাস রেখেছে। ব্যতিক্রম নয় আমেরিকাও। সেখান থেকে দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেওয়া হবে না বলে প্রতি ছ’মাস অন্তর সম্মতি জানিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। এ দফায় ট্রাম্পের সইয়ের তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে দু’দিন আগে। তাই দূতাবাস আদৌ তেল আভিভে থাকবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও ঘোষণা হলেও, তা কার্যকর হতে হতে অন্তত বছর চারেক লেগে যাবে বলে জানাচ্ছেন কূটনীতিকেরা। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ায় যে নতুন ভাবে হিংসার সম্ভাবনা তৈরি হল তা মেনে নিচ্ছেন কূটনীতিকেরা। সিরিয়ার পরিস্থিতির ফলে ওই অঞ্চল অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে। এই ঘোষণার ফলে প্যালেস্তাইনে ফের আগুন জ্বলতে পারে।