বিয়ের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি নবদম্পতি। ছবি রয়টার্স।
বছর চারেক আগে যখন তিনি বাগদানের ঘোষণা করেছিলেন, ছোটখাট ঝড় উঠেছিল দেশের সংবাদমাধ্যমে। নানা বিতর্ক আর বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে চার হাত এক হল আজ। জাপানের এক সাধারণ পরিবারের ছেলে কেই কোমুরোকে বিয়ে করলেন রাজকুমারী মাকো। একদা কলেজের সহপাঠী কেইয়ের জন্য রাজ পরিবারের বিশেষ মর্যাদা ছাড়লেন মাকো। রাজ পরিবারের ১০.৩ লক্ষ ডলার সম্পত্তিও আর দাবি করবেন না তিনি। জাপানের রাজ পরিবারের ঐতিহ্য আর প্রথা মেনে বিয়ের কোনও রীতিও পালন হয়নি আজ।
আদালত কক্ষে আনুষ্ঠানিক সই পর্ব সেরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন নবদম্পতি। সেখানে আরও এক বার প্রথা ভেঙে নিজের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মাকো কোমুরো। বলেছেন, ‘‘আমাদের বিয়ে নিয়ে এত রকমের মতামত গত কয়েক বছরে ঘোরাফেরা করেছে, তার সব কিছুই আমার জানা। আমাদের জন্য কারও কোনও অসুবিধে হয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত। আসলে আমাদের কাছে বিয়েটা হল এমন একটা অত্যাবশ্যক বিষয় যেখানে দুই হৃদয়ের মিল থাকাটা খুব জরুরি।’’
প্যাস্টেল রঙের ফুল হাতা পোশাক আর হাল্কা মুক্তোর গয়না পরে আজ নিজের বাড়ি ছাড়েন মাকো। মেয়েকে বিদায় জানাতে রাজপ্রাসাদের দরজা পর্যন্ত এসেছিলেন মাকোর বাবা, জাপানের বর্তমান সম্রাট নারুহিতোর ভাই, যুবরাজ ফুমিহিতো। ছিলেন মাকোর মা যুবরানী কিকো কাওয়াশিমা এবং বোন কাকো-ও।
কেই-ও সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা ভাবে কথা বলেছেন আজ। পরিচিত পনিটেল বিয়ের আগেই কেটে ফেলেছেন সদ্য তিরিশে পা দেওয়া যুবক। বলেছেন, ‘‘এই জীবনটা শুধুমাত্র তার সঙ্গেই কাটাতে চেয়েছি, যাকে আমি এত বছর ধরে ভালবেসেছি। ওকে খুশি রাখার সব চেষ্টাই আমি করব।’’
মাকোর সঙ্গে কেইয়ের এই বিবাহ পর্ব মসৃণ ছিল না মোটেও। যুগলের বাগদান ঘোষণা হওয়ার পরেই কেইয়ের মাকে জড়িয়ে একটি আর্থিক দুর্নীতি মামলা নিয়ে হইচই শুরু হয়। জাপানের ট্যাবলয়েডগুলির দাবি ছিল, ৩৫ হাজার ডলার জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে কেই ও তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে। এর কয়েক মাসের মাথায় আমেরিকায় পড়তে চলে যান কেই। বিষয়টি নিয়ে ভয়ানক অস্বস্তিতে ছিল জাপানের রাজপরিবার। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, নিজেদের ভাবমূর্তিতে কোনও রকমের আঁচ আসতে দিতে চান না রাজপরিবারের সদস্যেরা। আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন কেই। ২৪ পাতার একটি বিবৃতিও দেন তিনি।
মাকো-কেইয়ের এই বিয়ে নিয়ে কার্যত দু’ভাগে বিভক্ত ছিলেন জাপানের সাধারণ মানুষও। বিয়ের পরে নিউ ইয়র্কে সংসার পাততে চলেছেন নবদম্পতি।