মার্কিন দৈনিকের নিহত নিবন্ধলেখক জামাল খাসোগি। ছবি- এএফপি।
মার্কিন দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর নিবন্ধলেখক জামাল খাসোগির পাঁচ ঘাতককে ক্ষমা করে দিলেন তাঁর পুত্ররা। সৌদি আরবের রাজ আদালত পাঁচ ঘাতকেরই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। তবে খাসোগির পুত্রদের এই ক্ষমা প্রদর্শনকে মেনে নিতে পারেননি খাসোগির তুর্কি প্রেমিকা হ্যাটিস সেনজিগ। তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁর ঘাতকদের কখনওই ক্ষমা করা যায় না। উচিতই নয়।’’
জামালের এক পুত্র সালা খাসোগি শুক্রবার টুইটে জানিয়েছেন, আল্লার দোয়া পাবেন এই আশায় তাঁর বাবার ঘাতকদের তাঁরা ক্ষমা করে দিলেন। ঘাতকরা সকলেই সৌদি আরবের নাগরিক। এই ক্ষমা প্রদর্শনের ফলে, কিছুটা স্বস্তি ফিরল সৌদি সরকার ও রাজপরিবারে। জোরালো অভিযোগ উঠেছিল, মার্কিন দৈনিকের বিশিষ্ট নিবন্ধলেখক জামাল খাসোগিকে পাঁচ আততায়ী খুন করেছিল সৌদি সরকারের মদতেই। এর পিছনে ছিলেন সৌদি যুবরাজও। কারণ, ওয়াশিংটন পোস্টে তাঁর একের পর এক নিবন্ধে সৌদির যুবরাজ ও রাজপরিবারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন খাসোগি। প্রাণের ভয়ে তাঁকে এক বছর নির্বাসনেও থাকতে হয়েছিল।
টুইটে এ দিন সালা লিখেছেন, ‘‘আমরা শহিদ জামাল খাসোগির পুত্ররা ঘোষণা করছি, আল্লার দোয়া পাব এই আশায় আমরা বাবার ঘাতকদের ক্ষমা করে দিলাম।’’
২০১৭-র শেষের দিকে ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসের ভিতরেই খুন হয়েছিলেন মার্কিন দৈনিকের বিশিষ্ট নিবন্ধলেখক জামাল খাসোগি। কিন্তু তাঁর দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খাসোগির এক পুত্র সালা এখন থাকেন সৌদি আরবে। ওই খুনের ঘটনার জন্য ইতিমধ্যেই সৌদি আরবের রাজ আদালত থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাঁর সালা ও জামাল খাসোগির অন্য পুত্ররা। সালা জানিয়েছেন, ইসলামের ঐতিহ্য মেনে তাঁরা পবিত্র রমজানের মাসের শেষ রাতেই তাঁর বাবার ঘাতকদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন।
যদিও এই ক্ষমা প্রদর্শনের নিন্দা করেছেন খাসোগির তুর্কি প্রেমিকা হ্যাটিস সেনজিগ। তাঁর কথায়, ‘‘খাসোগি খুনের নৃশংস ঘটনাকে কখনওই ক্ষমা করা যায় না।’’
আরও পড়ুন: আমপানের মোকাবিলায় ফোনে মমতাকে সহযোগিতার আশ্বাস অমিতের
আরও পড়ুন: পুরীর মন্দিরে পান্ডাদের ফোন করছেন ভক্তরা
আদালতে শুনানির সময় সৌদি সরকারের তরফে বার বারই বলা হয়েছে, জামাল খাসোগির খুনের ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত নয়। এর পিছনে সরকারের কোনও মদতও ছিল না। বিন্দুবিসর্গও জানতেন না সৌদি যুবরাজ। আন্তর্জাতিক মহল অবশ্য তা মানতে চায়নি কোনও দিনই। মার্কিন গোয়েন্দাদের রিপোর্ট ছিল, যে ভাবে পরিকল্পনামাফিক ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসের ভিতরে খাসোগিকে খুন করা হয়েছিল এবং তাঁর দেহ লোপাট করা হয়েছিল, তা সৌদি যুবরাজের অজ্ঞাতসারে হতেই পারে না। এর ফলে, খাসোগি খুনের ঘটনা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে ছিল সৌদি সরকার, রাজপরিবার।
তবে এই ক্ষমা প্রদর্শনকে ‘সার্বিক’ বলে মানতে নারাজ সৌদি দৈনিক ‘আরব নিউজ’। দৈনিকের প্রতিবেদন জানিয়েছে, পাঁচ ঘাতকের যাতে মৃত্যুদণ্ড না হয়, শুধু সে ব্যাপারেই ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন জামাল খাসোগির পুত্ররা। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, খাসোগির ঘাতকদের কোনও শাস্তিই হবে না।