মডেলিং, সমাজসেবা থেকে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা। সব ভূমিকাতেই সমান স্বচ্ছন্দ ইভাঙ্কা ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর উজ্জ্বল জীবনের আড়ালেও লুকিয়ে আছে সম্পর্ক ভাঙার ব্যথা, অবসাদের বিষণ্ণতা। সে সব নিয়ে অকপট স্বীকারোক্তিতেও দ্বিধাহীন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা।
ইভাঙ্কার জন্ম ১৯৮১ সালের ৩০ অক্টোবর। তাঁর মা ইভানা চেক-মার্কিন নাগরিক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইভানার বিয়ে হয় ১৯৭৭ সালে। দীর্ঘ দেড় দশক পর ভেঙে যায় তাঁদের দাম্পত্য।
১৯৯২ সালে প্রথম স্ত্রী ইভানাকে ডিভোর্স করেন ট্রাম্প। তখন ইভাঙ্কার বয়স ১১ বছর। দুই ভাই ডোনাল্ড জুনিয়র এবং এরিকের সঙ্গে ইভাঙ্কা বড় হন মায়ের কাছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বৈমাত্রেয় ভাই-বোন টিফানি ও ব্যারনের সঙ্গেও ইভাঙ্কার সম্পর্ক ভাল।
১৫ বছর বয়স অবধি ইভাঙ্কার পড়াশোনা নিউইয়র্কের শ্যাপিন স্কুলে। তারপর তাঁকে পাঠানো হয় কানেকটিকাটের এক বোর্ডিং স্কুলে। এরপর ইভাঙ্কা দু’বছর পড়াশোনা করেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শেষে অর্থনীতিতে স্নাতক হন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তাঁর মা ইভানা ছিলেন মডেল। মায়ের মতো ইভাঙ্কাও মডেলিং করেন ছাত্রীজীবনে। স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি টমি হিলফিগারের মতো ব্র্যান্ডের হয়ে মডেলিং করেন। ‘ভোগ’, ‘ফোর্বস লাইফ’, ‘টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি’-র মতো নামী ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পত্রিকার প্রচ্ছদে দেখা গিয়েছে ইভাঙ্কাকে।
পড়াশোনার পরে ইভাঙ্কা কয়েক দিন অন্য সংস্থায় কাজ করেন। তারপর যোগ দেন ট্রাম্প অর্গানাইজেশনে। সেইসঙ্গে শুরু করেন নিজস্ব অ্যাকসেসরিজের ব্যবসা। বাবা ট্রাম্পের মতো ইভাঙ্কাও জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন থেকে ইস্তফা দেন তিনি এবং মেয়ে ইভাঙ্কা। পরে ইভাঙ্কা যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পদে।
নির্বাচনী প্রচার থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম কয়েক মাস। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে বেশি দেখা যেত ইভাঙ্কাকেই। তুলনায় অনেকটাই কম থাকতেন ট্রাম্পের তৃতীয় তথা বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য পাল্টে যায় ছবিটা। এখন মার্কিন ফার্স্ট লেডির ভূমিকায় সপ্রতিভ মেলানিয়া ট্রাম্পই।
সংবাদমাধ্যমে ইভাঙ্কাও স্পষ্ট জানিয়েছেন ছদ্ম ফার্স্ট লেডি হওয়ার কোনও ইচ্ছে তাঁর নেই। প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের তরফে কোনও বেতন নেন না ইভাঙ্কা। তিনি একজন সক্রিয় সমাজকর্মীও। অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে।
কলেজে পড়ার সময় ইভাঙ্কার সম্পর্ক ছিল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার গ্রেগ হার্শের সঙ্গে। কিন্তু চার বছর পরে সে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর তাঁর জীবনে এসেছিলেন বিঙ্গো গুবেলমান। কিন্তু সেই সম্পর্কও চার বছরের বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
এরপর এক বন্ধুর মাধ্যমে ইভাঙ্কার আলাপ হয় রিয়েল এস্টেট ডেভলপার জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে। কিন্তু কুশনারের বাবা মায়ের আপত্তিতে ২০০৮ সালে ভেঙে যায় সেই সম্পর্ক।
কিন্তু তারপরেও কাছাকাছি আসেন ইভাঙ্কা-জ্যারেড। জোড়া লাগে তাঁদের সম্পর্ক। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর ইহুদি রীতিতে বিয়ে হয় দু’জনের। কারণ জ্যারেড ইহুদি ধর্মাবলম্বী।
বিয়ের কয়েক মাস আগে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন ইভাঙ্কা। তাঁর হিব্রু নাম ‘ইয়েল’। ইহুদি সম্প্রদায়ের রীতি ও অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি ধর্মীয় স্থানেও নিয়মিত দেখা যায় ইভাঙ্কা ও তাঁর স্বামীকে।
জ্যারেড ছিলেন ইনভেস্টার, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার এবং সংবাদপত্র প্রকাশক। পরে তিনিও যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পদে।
দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য জানার ক্ষেত্রে অবাধ ক্ষমতা আর নেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাই এবং শীর্ষ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের। ২০১৮-র মার্চে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসে।
এর ফলে কুশনারের অবস্থান ‘টপ সিক্রেট’ থেকে নেমে ‘সিক্রেট’ স্তরে রাখা হয় বলে দাবি। দেশের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসন যখন অস্বস্তির মুখে, তখনই কুশনারকে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি। তবে গোপন তথ্য জানার ক্ষেত্রে কুশনারের ক্ষমতা খর্ব হলেও প্রেসিডেন্টের হাতে সেই বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে যার আওতায় তিনি যাঁকে চান, তাঁকে গোপন তথ্য দেখাতে পারেন।
জ্যারেড-ইভাঙ্কার মেয়ের জন্ম হয় ২০১১ সালে। এরপর ২০১৩ এবং ২০১৬, দু’বছরে দু’টি পুত্রসন্তানের মা হন ইভাঙ্কা। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প-কন্যা জানিয়েছেন, প্রত্যেক বার মা হওয়ার পরে তিনি সদ্য-মাতৃত্ব-পরবর্তী অবসাদ বা ‘পোস্ট পার্টাম’ বা ‘পোস্ট নেটাল ডিপ্রেশন’-এর শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু পরে সেই অবসাদ কাটিয়েও উঠেছেন। (ছবি: আর্কাইভ ও ফেসবুক)