গাজ়া শহরের রাস্তা দিয়ে চলেছে ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্ক। ছবি: সংগৃহীত।
সালা-আল-ডিন রোড। উত্তর ও দক্ষিণ গাজ়াকে যুক্ত করে এই সড়ক। শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই রাস্তা দিয়ে চলেছে ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্ক। সামনে একটি গাড়ি চলে এসেছিল। ট্যাঙ্ক থেকে ছোড়া হল গোলা। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ, জ্বলে উঠল চারপাশ, যাত্রী-সহ নিমেষে অগ্নিপিণ্ড সেই গাড়ি।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের এই ভিডিয়ো। ওই রাস্তাতেই থাকা অন্য একটি গাড়ি থেকে ভিডিয়োটি করা হয়েছে। চারপাশে ধ্বংসস্তূপের মাঝে এই রাস্তাটি এত দিন বেঁচে ছিল। এই পথেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল জখমদের। এই পথেই সাধারণ মানুষ গাজ়া স্ট্রিপের উত্তর থেকে দক্ষিণে পালাচ্ছিলেন। ওয়াদি গাজ়ার কাছে সেই রাস্তাও এখন রণভূমি। ইজ়রায়েল যে দাবি করেছিল, তারই প্রমাণ এই ভিডিয়ো। গাজ়া শহরের একেবারে ভিতরে ঢুকে গিয়েছে ইজ়রায়েলি স্থলবাহিনী। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০০টি নিশানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। স্থল-অভিযানের পাশাপাশি আকাশপথেও হামলা চলছে। তবে সালা-আল-ডিনের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেনি আইডিএফ।
উত্তর গাজ়া ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আইডিএফ। উত্তর থেকে অভিযান শুরু করে ধীরে ধীরে দক্ষিণের দিকে এগোনো, এটাই তাদের রণকৌশল। কিন্তু উত্তরের হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে রোগী। কালই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে জানানো হয়েছে, হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরানো কার্যত অসম্ভব। তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই ইজ়রায়েলের।
আল-কুয়াদ হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন, ৪০০ রোগী রয়েছে। এর মধ্যে অনেকে ইন্টেনসিভ কেয়ারে ভর্তি। এ ছাড়া, ১৪ হাজার সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন।
যুদ্ধ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এটা স্পষ্ট, ইজ়রায়েল ক্রমশই অভিযানের গতি বাড়াবে। যাঁরা এখনও উত্তর গাজ়ায় আটকে রয়েছেন, তাঁদের আশঙ্কা আইডিএফ সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেবে উত্তরকে। গাজ়া স্ট্রিপের উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার দু’টো রাস্তা রয়েছে। একটা সালা-আল-ডিনে, যেখানে ট্যাঙ্ক টহল দিচ্ছে। অন্যটি সমুদ্রের উপকূল ঘেঁষে যাওয়া একটি সরু রাস্তা। সে পথ আরও বিপদসঙ্কুল। ইজ়রায়েলি যুদ্ধজাহাজ থেকে মুহুর্মুহু ধেয়ে আসছে গোলা।
এর মধ্যেই ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আজ স্পষ্ট করেছেন, গাজ়ায় সংঘর্ষ-বিরতির কোনও সম্ভাবনাই এখন নেই। এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি আরও জানিয়েছেন, হামাসের হাতে বন্দি ২৩০ জন ইজ়রায়েলি নাগরিককে মুক্ত করতে তাঁদের বন্ধু দেশগুলির আরও সক্রিয় সহায়তা প্রয়োজন। তবে সময় যত এগোচ্ছে, হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলিদের বেঁচে থাকার আশা ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে।
গাজ়ায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি রুশদি আবলুফ জানান, কাল থেকে দক্ষিণ গাজ়ায় হামলা তুলনামূলক ভাবে কমেছে। তাঁর কথায়, ‘‘ইজ়রায়েলি বাহিনী এই মুহূর্তে উত্তর ও গাজ়া শহরে নজর দিচ্ছে। চারদিকে ট্যাঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’’