গাজ়ার ধ্বংসস্তূপে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: রয়টার্স।
রাতের সঙ্গীতের আসরে পার্টি করার জন্য জড়ো হয়েছিলেন তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই যে সেখানে মৃত্যুর হাহাকার শুরু হবে, সেই ধারণা ছিল না কারও। শনিবার গাজ়ার কাছে কিববুজ় রেইম এলাকায় সঙ্গীতের আসরের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই আসরেই প্রথম আক্রমণ চালায় প্যালেস্টাইনের হয়ে অস্ত্র হাতে নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
স্থানীয় বেশ কয়কেটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোটরবাইক, স্পিড বোট, ট্রাকে চেপে ওই আসরে ঢুকে পড়েছিল হামাস বাহিনী। তার পরই দর্শকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে তারা। প্রাণ বাঁচতে দিশাহীন ভাবে ছুটতে শুরু করেন সকলে। ‘বম্ব শেল্টার’-এ গিয়েও লুকিয়ে পড়েন বহু মানুষ। কিন্তু সেখানে আশ্রয় নিয়েও অনেকের প্রাণরক্ষা হয়নি।
ওই সঙ্গীত আসরেই উপস্থিত ছিলেন লি সাসি নামের এক তরুণী। তাঁর দাবি, হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে সাত ঘণ্টা মৃতদেহের স্তূপের নীচে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পর তাঁর বান্ধবী নাতাশা রাকেল কার্তচুক গাটম্যানকে ইনস্টাগ্রামে সেই মর্মান্তিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন লি।
সমাজমাধ্যমে দুই বান্ধবীর কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে (যদিও এর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। শনিবার রাতের ঘটনা উল্লেখ করে লি লেখেন, ‘‘আমরা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন শেল্টারে লুকিয়ে পড়েছিলাম। বাইরে গুলি, বোমার আওয়াজ। আমরা কী করব বুঝতে পারছিলাম না। আতঙ্কে ছিলাম। ওই ঘরের কোনও দরজা ছিল না। কিছু ক্ষণ পর দেখি আমাদের ওরা ঠিক খুঁজে পেয়ে গিয়েছে। ঘরে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাল ওরা। সাত ঘণ্টা ওই ঘরে মৃতদেহের স্তূপের তলায় আমি চাপা পড়ে গিয়েছিলাম।প্রাণে বাঁচতে তাই ওই লাশগুলির সঙ্গে মরার ভান করে পড়েছিলাম। সাত ঘণ্টা পর ওই ঘর থেকে আমাদের উদ্ধার করা হয়। একসঙ্গে অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলাম ওই ঘরে। যখন আমাদের উদ্ধার করা হল তখন দেখি ১০ জন বেঁচে রয়েছেন।’’
ইজ়রায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজ়ায় ঘরছাড়া এক লক্ষ ৮৭ হাজার ৫০০ জন। মঙ্গলবার এই কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। গত শনিবার থেকে ইজ়রায়েলে হামলা চালাচ্ছে হামাস। সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংগঠন ওসিএইচএ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শনিবার থেকে গাজ়ায় হিংসার কারণে ঘরছাড়া এক লক্ষ ৮৭ হাজার ৫০০ জন। তাঁরা এখন আশ্রয় নিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের স্কুলে। হামাসের হামলার পর গাজ়াকে হাতের সঙ্গে ভাতে মারার পণ করেছে ইজ়রায়েল। খাবার, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, জরুরি পরিষেবার জন্য তারা অনেকাংশেই ইজ়রায়েলের উপর নির্ভরশীল। সেই জরুরি পরিষেবাও বন্ধ করেছে ইজ়রায়েল।