প্রতীকী ছবি।
সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া ডুবোজাহাজ, ‘নাঙ্গালা ৪০২’-তে থাকা ৫৩ জন নাবিককে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা গতকালই ধুলিসাৎ করেছিল ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী। এর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সমুদ্রের তলায় খোঁজ মিলল ডুবোজাহাজটির সিংহভাগ ধ্বংসাবশেষের। যে অবস্থাতে সেটির দেখা মিলেছে তার পর ডুবোজাহাজটিতে থাকা ওই ৫৩ জন নাবিকের কেউ-ই আর বেঁচে নেই বলে নিশ্চিত করল ইন্দোনেশিয়া।
সিঙ্গাপুরের পাঠানো বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ধারকারী জাহাজের ‘স্ক্যান’ পদ্ধতির মাধ্যমে বালি উপকূলের অদূরে সমুদ্রের প্রায় ৮৫০ মিটার (২৮০০ ফিট) গভীরে নজরে এসেছে সেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ডুবোজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ। দেখা গিয়েছে, তিন ভাগে ভাগ হয়ে সমুদ্রতলে ছড়িয়ে রয়েছে অংশগুলি। যে জায়গা থেকে গত বুধবার নৌ-মহড়া শুরু করেছিল প্রায় চুয়াল্লিশ বছরের পুরনো ওই ডুবোজাহাজটি, সমুদ্রের নীচে তার প্রায় ১,৫০০ মিটার (ইয়ার্ড) দক্ষিণে সেটির সন্ধান মিলেছে বলে জানান নৌ-আধিকারিকেরা। কাঠামো, অগ্রভাগ এবং মূল অংশ— তিনটেই আলাদা হয়ে গিয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন নৌবাহিনীর প্রধান উডো মার্গোনো। মূল অংশেও একাধিক চিড় ধরা পড়েছে। শনিবারই ডুবোজাহাজটির তলিয়ে যাওয়া সম্পর্কিত একাধিক চিহ্ন ও ধ্বংসাবশেষ নজরে আসায় সেটির নাবিকদের জীবিত উদ্ধারের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও ধ্বংসাবশেষের পুরোটা খুঁজে বার করতে অব্যাহত ছিল তল্লাশি।
রবিবার ভোরের দিকে সমুদ্রের ৮০০মিটারেরও (২৬০০ ফিট) বেশ খানিকটা নীচ থেকে সিগন্যাল পেতে শুরু করেন উদ্ধারকারীরা। যে সূত্র ধরেই আরও গভীরে এগোয় তল্লাশি অভিযান। শেষমেশ সিঙ্গাপুরের পাঠানো ডুবোজাহাজ উদ্ধারে পারদর্শী বিশেষ জাহাজ ‘এমভি সুইফ্ট রেসকিউ’-এর’ মাধ্যমে সমুদ্রের প্রায় ৮৫০ মিটার (২৮০০ ফিট) গভীর থেকে তুলে আনা হয় ডুবোজাহাজটির ধ্বংস-চিত্র। এ দিনই উদ্ধার হয়েছে ডুবোজাহাজটির একটি নোঙ্গর ও নাবিকদের ব্যবহারের একাধিক ‘লাইফ জ্যাকেট’। এই মর্মান্তিক পরিণতির জন্য নাবিকদের পরিবারের প্রতি বিশেষ সমবেদনা জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো।
ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর কাছে মোট পাঁচটি ডুবোজাহাজ রয়েছে। যার অন্যতম ছিল এই ‘নাঙ্গালা ৪০২’। এই দুর্ঘটনার নেপথ্যের কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় নৌ-আধিকারিকেরা। নিখোঁজ হওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার পাঠানো কমপক্ষে ১২টি হেলিকপ্টার এবং জাহাজ মিলে ডুবোজাহাজটির খোঁজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সেই উদ্ধারকারী দলের একাংশের দাবি, আধুনিকীকরণের অভাবই এই ঘটনার জন্য দায়ী।
এই প্রসঙ্গে সরব পূর্ব জাভার উপকূল শহর বানয়ুওয়াঙ্গির বাসিন্দারাও। তাঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘এই ঘটনা থেকে সরকারের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে সামরিক ক্ষেত্রের আধুনিকীকরণ কতটা জরুরি। না হলে এ ভাবেই প্রাণ যাবে দেশের নাগরিকদের।’’ প্রসঙ্গত, প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকলেও এখনও বেশ কিছু পুরোনো যান বা সরঞ্জামের ব্যবহার বন্ধ করেনি বাহিনী। যার জেরে সাম্প্রতিককালে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ডুবোজাহাজটি প্রায় ১৯৮১ সাল থেকে ব্যবহার করছে নৌবাহিনী। তারা সেটি ভাল অবস্থাতেই ছিল বলে দাবি করলেও সমুদ্রের জলে তেলের আস্তরণ ভাসতে দেখে উদ্ধারকারীদের ধারণা, সেটির অয়েল ট্যাঙ্কারটি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। সঙ্গে অন্য অংশের ক্ষতির নিদর্শনও রয়েছে বলে দাবি তাঁদের। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।