গাজ়ার হামলার প্রতিবাদে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘গণহত্যাকারী’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে এক বিক্ষোভকারী। শুক্রবার, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় আমেরিকান দূতাবাসের বাইরে। ছবি: রয়টার্স।
কখনও শরণার্থী শিবির, কখনও আবার মানবিক সহায়তা নিয়ে আসা ট্রাক— ইজ়রায়েলি হানা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছে না প্যালেস্টাইনের প্রায় কিছুই। এক দিকে, শুক্রবার জাবালিয়ার শরণার্থী শিবিরে ইজ়রায়েলি সামরিক বাহিনীর হানায় নিহত হয়েছেন অন্তত ছ’জন। এই নিয়ে গত ছ’দিনে শুধুমাত্র জাবালিয়া থেকেই অন্তত ৯৩ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। ট্যাঙ্কের ক্রমাগত হামলার জেরে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে বাসস্থানগুলি। অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘গণহত্যার’ অভিযোগ নস্যাৎ করে ইজ়রায়েল দাবি করেছে, গাজ়ার সাধারণ মানুষকে ভাল রাখতে ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নিয়েছে তারা।
হামাস পরিচালিত গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের খবর, এখনও পর্যন্ত গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলি হানায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ হাজার তিনশো মানুষ। গুরুতর ভাবে আহত ৭৯ হাজারেরও বেশি। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে ‘সেফ জ়োন’ (সুরক্ষিত এলাকা) বলে পরিচিত রাফায় হামলা শুরুর পর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে রাফা ছেড়ে গিয়েছেন অন্তত সাড়ে ছ’লক্ষ মানুষ। এই এক সপ্তাহে গাজ়া ভূখণ্ডে কোনও মানবিক সহায়তাও পৌঁছয়নি বলে জানানো হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
ইজ়রায়েলি হানায় ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর গাজ়ার জাবালিয়াও। এক সপ্তাহের মধ্যেই নিহতের সংখ্যা ১০০ ছুঁইছুঁই। পথেঘাটে বা ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে যে ভাবে একের পরে এক দেহ উদ্ধার হচ্ছে, তাতে আশঙ্কা, আগামী দিনে আরও বাড়বে হতাহতের সংখ্যা। হামলা প্রসঙ্গে এক বাসিন্দা আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ট্যাঙ্ক, জেটের হামলায় ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে আমাদের বসবাসের এলাকাগুলি। ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দোকান, রেস্তরাঁ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ প্রায় সবই।’’
তবে এ সবের মাঝে আন্তর্জাতিক আদালতে আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ফের অভিযোগ তুলেছে, গাজ়ায় ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। সময়ের সঙ্গে তা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে বলেও দক্ষিণ আফ্রিকার দাবি। তবে তাদের এই অভিযোগ নস্যাৎ করে ইজ়রায়েলের দাবি, দক্ষিণ আফ্রিকার যোগসাজশ রয়েছে হামাসের সঙ্গে। তাই তাদের তোলা ‘গণহত্যার’ অভিযোগ পক্ষপাতদুষ্ট এবং মিথ্যা। আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন গাজ়ায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে, তখন ইজ়রায়েল সরকারের দাবি, গাজ়ার সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত ও সুস্থ রাখতে ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ করছে তারা। তাই ইজ়রায়েলের দাবি, দক্ষিণ আফ্রিকার এই যুদ্ধবিরতির আর্জি খারিজ করে তাদের উপরে ‘আদালতের হেনস্থা বন্ধ করা হোক’।