ইসলামিক স্টেট-খোরাসান। সংক্ষেপে আইএস-কে। কাবুল বিমানবন্দরে হামলার জেরে আলোচনায় চলে এসেছে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম। আদতে এরা পশ্চিম এশিয়ার জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর আফগান শাখা।
বর্তমান পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের একাংশ নিয়ে ছিল প্রাচীন খোরাসান অঞ্চল। আইএস-এর আফগান শাখা ওই অঞ্চলকে তাদের নামে জুড়ে নিয়েছে।
প্রায় দু’দশক আগে আইএস-এর প্রতিষ্ঠা করেন আল কায়দার ইরাকি শাখার প্রধান আবু মুসাব আল জারকোয়াই। সে সময় সংগঠনের নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত (আইএসআইএল)।
তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডন, লেবানন, সাইপ্রাস, প্যালেস্তাইন এবং ইজরায়েলের একাংশ নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন লেভান্ত ভূখণ্ড। পরে সাময়িক ভাবে সংগঠনের নাম হয় ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)।
গত কয়েক বছরে একাধিক বার আফগানিস্তানে নানা নাশকতায় আইএস-কের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি, তালিবান ঘাঁটিতেও আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা। মূল সংগঠন আইএস-এর মতোই তাদের লক্ষ্য খিলাফতের (খলিফার শাসন) পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
পাক সীমান্ত ঘেঁষা উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের নানগরহর, নুরিস্তান, কুনার প্রদেশ আইএস-কের ঘাঁটি। রাজধানী জালালাবাদ-সহ নানগরহরের বেশ কিছু এলাকাতেই শিবির রয়েছে তাদের। এখানেই হানা দিয়েছে আমেরিকার ড্রোন।
একদা পাশতুন ‘ওয়ারলর্ড’ গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের নিয়ন্ত্রণে ছিল নানগরহর। পরে তালিবানের দখলে যায়। এখানে সক্রিয় আইএস-কে গোষ্ঠীতে পাশতুনের পাশাপাশি আরব, পাক, উইঘুর এবং মধ্য এশিয়ার জঙ্গিরাও রয়েছে।
২০১৪-য় পাক তালিবান নেতা হাফিজ সইদ খান আইএস-কে গঠন করেন। তৎকালীন আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির অনুগামী হাফিজ ২০১৬-য় আমেরিকার বিমান হানায় নিহত হন। বাগদাদির মৃত্যু ২০১৯-এ সিরিয়ায়। আমেরিকার সেনার হামলায়।
২০১৫ সালে আফগানিস্তানে আইএস-কের প্রায় তিন হাজার জঙ্গি ছিল। তাদের বড় অংশই প্রাক্তন তালিবান। আমেরিকার সাহায্যে তাদের দমন করতে অভিযানে নামে আফগান সরকার। তাতে সাফল্যও মিলেছিল।
ওসামা বিন লাদেনের জমানায় আল কায়দার সঙ্গে সখ্য ছিল আইএস-এর। পরবর্তী আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির সময় দুই সংগঠনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। আল কায়দা ঘনিষ্ঠ তালিবানেরও বিরোধিতা শুরু করে আইএস।
তালিবান এবং আইএস দু’টি সংগঠনই সুন্নি মুসলিম সংগঠন। কিন্তু তালিবান ইসলামের দেওবন্দি মতাদর্শের অনুসারি। আইএস অনুসরণ করে সালাফি মতবাদকে। সুফি মতবাদের কট্টর বিরোধী তারা।
নৃশংসতায় তালিবানকেও ছাপিয়ে গিয়েছে আইএস। তালিবান সংগঠনে মহিলারা না থাকলেও পশ্চিম এশিয়ায় আইএস যোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন মহিলা জিহাদিরা।