Bangladesh Unrest

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ব জুড়ে ইসকনের ‘শান্তিপ্রার্থনা’ রবিবার! ছড়াচ্ছে প্রতিবাদ

ভারত এবং বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইসকনের মন্দির রয়েছে। ভক্তদের রবিবার ‘শান্তিপ্রার্থনা’য় শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসকন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০১
Share:

জোরালো হচ্ছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবি। ছবি: পিটিআই।

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কামনায় রবিবার বিশ্ব জুড়ে শান্তিপ্রার্থনা এবং কীর্তনের আয়োজন করছে ইসকন। বাংলাদেশে শে‌খ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে এসেছে। সম্প্রতি ইসকনের প্রাক্তন সদস্য চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। খারিজ হয়েছে জামিনের আবেদন। চিন্ময়ের গ্রেফতারির পর থেকে প্রতিবাদের স্বর আরও জোরালো হয়েছে। এই আবহে ও পার বাংলায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য রবিবার দেশে দেশে শান্তিপ্রার্থনা এবং কীর্তনের আয়োজন করছে ইসকন। ভারত, বাংলাদেশ-সহ এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইসকনের মন্দির রয়েছে। ভক্তদের নিকটবর্তী ইসকন মন্দিরে শান্তিপ্রার্থনায় শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ইসকন।

Advertisement

সম্প্রতি ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সে দেশের হাই কোর্টে মামলা করে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। পরবর্তী সময়ে চিন্ময়ের গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার আবহে চিন্ময়-সহ ১৭ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এক মাসের জন্য ‘ফ্রিজ়’ করার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের তদারকি সরকার। একাধিক সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করেছে বাংলাদেশ সরকার, তাঁরা ইসকনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, ইসকনের সঙ্গে যোগ থাকার কারণে সে দেশের বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়াকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছে।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। এই আবহে বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন মিলিত ভাবে তৈরি করে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ। যার অন্যতম মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ। তিনি আগে ইসকনের সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে মাসখানেক আগেই তাঁকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ইসকন। তবে চিন্ময়ের গ্রেফতারির পর প্রাক্তন সদস্যের প্রতি সংহতি জানিয়েছে ইসকন বাংলাদেশ। ইসকন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “চিন্ময়কৃষ্ণের অধিকার, বাংলাদেশে হিন্দুদের এবং তাঁদের ধর্মীয় স্থানগুলি রক্ষার জন্য তাঁর প্রচেষ্টাকে ইসকন সমর্থন করে। তাঁর থেকে দূরত্ব তৈরি করা হয়নি।”

Advertisement

সম্প্রতি চিন্ময়ের ডাকে চট্টগ্রামের এক সমাবেশে হাজার হাজার সংখ্যালঘু জমায়েত হন। ওই সমাবেশের পর দেশদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার হন চিন্ময়। তাঁর জামিন না-মঞ্জুর হওয়ার পর চট্টগ্রাম আদালতের সামনে বিক্ষোভ দেখান চিন্ময়ের অনুগামীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ওই সংঘর্ষের সময়ে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়। চিন্ময়ের গ্রেফতারির সময় থেকে বার বার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, শুক্রবার চট্টগ্রামের পাথরঘাটা অঞ্চলে একটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মন্দিরের আশপাশের কয়েকটি দোকান ও বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ভারত বার বার অনুরোধ করেছে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ব্রিটেনের সংসদেও বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের নিন্দা করেছেন ব্রিটেনের কনজ়ারভেটিভ দলের সাংসদ বব ব্ল্যাকম্যান। ব্রিটেনের সংসদে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির পরিচালনা করে ইসকন। তাদের ধর্মীয় নেতা (প্রাক্তন) বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন।” লেবার পার্টি পরিচালিত ব্রিটেন সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছেন তিনি।

যদিও বাংলাদেশের সরকারের বক্তব্য, সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদই রয়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের ‘হস্তক্ষেপ’ পছন্দ করছে না মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তদারকি সরকারের অবস্থান জানিয়েছেন ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপুঞ্জেও বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন ভাবে ধর্মচর্চার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য।

তবে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ থামেনি। ইসকনের তরফে সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিন দফা দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম দাবি, সনাতনীদের উপর হামলাকারীদের শনাক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি, চিন্ময়কৃষ্ণ এবং অন্য সনাতনীদের নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। তৃতীয় দাবি, বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement