আবু বকর আল-বাগদাদি। —ফাইল চিত্র।
বাগদাদিকে খতম করতে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার দাওয়াই-ই শেষমেশ কাজে এল আমেরিকার। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর চাঁই আবু বকর আল-বাগদাদির নাগাল পেতে তারই এক সহযোগীকে কাজে লাগিয়েছিল পেন্টাগন। বাগদাদির মৃত্যুর পর মার্কিন সরকারের অভিযান নিয়ে যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সর্বত্র, ঠিক সেই সময় এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে সে দেশের সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
মার্কিন সরকারের দুই আধিকারিককে উদ্ধৃত করে ওই সংবাদপত্র জানিয়েছে, গুপ্তচর মারফত জানা গিয়েছিল, বাগদাদির বিশ্বস্ত অনুচর ওই ব্যক্তি। কিন্তু জঙ্গিরা তার এক নিকট আত্মীয়কে খুন করলে ক্ষোভ জন্মায় তার মধ্যে। সেই সুযোগে প্রথমে তাকে নিজেদের দলে টানে সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর সহযোগী সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)।
নিজেদের মতো করে ওই ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে এসডিএফ। তখনই জানা যায়, বাগদাদির গোপন ডেরার ঠিকানা তো জানেই সে, এমনকি ওই গোপন ডেরার নকশাও মুখস্ত তার। তার পরই মার্কিন বাহিনীর হাতে ওই ব্যক্তিকে তুলে দেয় তারা। সে আদৌ সত্যি বলছে কিনা, দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণে রেখে আগে তা নিশ্চিত করা হয়। তার পর গ্রীষ্মের শুরু থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয় তার।
আরও পড়ুন: ডিএনএ মেলাতে মৃত্যুর আগে বাগদাদির অন্তর্বাস ‘চুরি’ করেছিলেন কুর্দ গুপ্তচর
তবে গত কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণ চললেও, কয়েক সপ্তাহ আগেই বাগদাদির ডেরায় হামলার সুযোগ আসে। সেই মতো প্রস্তুতি সেরে গত ২৬ অক্টোবর ইদলিব প্রদেশের বারিশা এলাকায় বাগদাদির ডেরায় হানা দেয় মার্কিন বাহিনীর অভিজ্ঞ ডেলটা এবং ৭৫তম রেঞ্জার রেজিমেন্ট। অকস্মাৎ হামলায় এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাগদাদি। সুড়ঙ্গের মধ্যে আত্মঘাতী জ্যাকেটের বোতাম টিপে তিন সন্তান ও নিজেকে উড়িয়ে দেয় সে।
আরও পড়ুন: ওসামা বিন লাদেনের মতো সমুদ্রে সমাধি দেওয়া হল আইএস প্রধান বাগদাদির দেহাংশ
বাগদাদির সহযোগী ওই ব্যক্তির কথা জানালেও, তার পরিচয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি মার্কিন সরকারের ওই আধিকারিকরা। তবে তাঁদের সংগঠনের হয়ে চরবৃত্তি করা ওই ব্যক্তিকে তাঁরাই মার্কিন বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলে মার্কিন টিভি চ্যানেল এনবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান এসডিএফ নেতা জেনারেল মজলুম আবদি। বাগদাদির বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালীন ঘটনাস্থলেই ছিল ওই ব্যক্তি। এমনকি বাগদাদির মৃত্যুর পরেও সে ইদলিবে ছিল বলে জানা গিয়েছে। দু’দিন পর পরিবার-সহ তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। মার্কিন সরকারের তরফে বাগদাদির মাথার দাম ২.৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঘোষণা করা হয়েছিল, ভারতীয় মুদ্রায় যা ১৭০ কোটি টাকার বেশি। ওই ব্যক্তি সেই টাকার কিছুটা অংশ পাবে বলে জল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে। তবে এ নিয়ে পেন্টাগনের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।