নীল বসু। ফাইল চিত্র।
আর্থার কোনান ডয়েলের গল্পে জটিল রহস্যের পর্দা উন্মোচনে যে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সাহায্য অনেক সময়েই নিয়েছেন শার্লক হোমস, লন্ডনের সেই প্রাচীন পুলিশ বাহিনীর শীর্ষে এ বার এক বঙ্গসন্তানের আসার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। ১৮২৯ সালে গড়ে ওঠা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ওরফে মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিসের শীর্ষকর্তা ডেম ক্রেসিডা ডিক গতকাল ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর জায়গায় বঙ্গসন্তান নীল বসু (৫৩) আসতে পারেন বলে জল্পনা ইতিমধ্যে তুঙ্গে।
গত কয়েক বছরে ডেমের নেতৃত্বাধীন পুলিশ বাহিনী বর্ণবিদ্বেষ, লিঙ্গবৈষম্য, সমকামীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ-সহ নানা অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে। সম্প্রতি চারিং ক্রস পুলিশ স্টেশনের ১৪ জন পুলিশকর্মীর নিজেদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা, বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য চালাচালি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান কমিশনার ক্রেসিডার কাছে তার সম্ভাব্য সমাধানের কথা জানতে চেয়েছিলেন। সূত্রের খবর, ক্রেসিডার জবাবে সন্তুষ্ট হননি সাদিক। তিনি জানিয়েছেন, ক্রেসিডার উপরে আর ভরসা রাখতে পারছেন না তিনি। পরবর্তী কমিশনার হিসাবে বিভিন্ন মহলে নীল বসুর নামই উঠেছে। শূন্যস্থান পূরণে ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পটেল। সাদিকের সঙ্গে আলোচনার পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে হবে।
তবে ক্ষমতায় এসেই নীলের প্রথম দায়িত্ব হবে পুলিশের ভাবমূর্তি সাফ করা। লকডাউনের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অন্তত ১২টি পার্টির কথা সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় তপ্ত দেশের রাজনীতি। এই ঘটনার তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
তবে নীলের রাস্তায় কাঁটা কম নয়। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, তাঁর অভিবাসন সংক্রান্ত নীতির কড়া সমালোচক নীল বসুকে তেমন পছন্দ করেন না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনেরও অপছন্দের তালিকায় রয়েছেন নীল। হিজাব পরা মহিলাদের ‘লেটার বক্স’ বলে বিতর্কিত মন্তব্য করায় প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছিলেন এই বঙ্গসন্তান।
নীলের শেকড় কলকাতায় হলেও জন্ম এবং বড় হয়ে ওঠা বিলেতে। বাঙালি চিকিৎসক বাবা এবং ওয়েলসের নাগরিক মায়ের সন্তান নীলের পুরো নাম অনিলকান্তি ‘নীল’ বসু। জীবনের নানা মোড়ে তাঁকেও যে বর্ণবিদ্বেষের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজেই সে কথা জানিয়েছেন তিন পুত্রের পিতা নীল। তাঁর স্ত্রী নীনা কোপ ‘ব্রিটেনের এফবিআই’ বলে পরিচিত ‘ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি’র উচ্চপদস্থ কর্তা।
স্ট্যাফোর্ডের ওয়ালটন হাই স্কুল থেকে পাশ করে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৯৯২ সালে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনীতে যোগদান। ২০১৪ সালে অপরাধ দমন শাখার কমান্ডার হিসাবে নিযুক্ত হন। তিন বছরের মধ্যে ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তদন্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নীল।