ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র ।
গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলি আগ্রাসন রুখতে নিজেদের ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগ করুক ভারত! ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এমনটাই আর্জি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসের। সোমবার রইসের সঙ্গে টেলিফোনে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করেন মোদী। সেই সময়ই মোদীর কাছে রইস ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগের এই আহ্বান জানিয়েছেন বলে ইরানের তরফে এক বিবৃতি প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে।
দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে যুদ্ধ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনার সময় ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গও তুলে আনেন রইস। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতের ভূমিকার কথাও তিনি মোদীকে স্মরণ করিয়ে দেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এর পরই নাকি তিনি মোদীকে ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগ করার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গাজ়ার নিপীড়িত জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিদের অত্যাচার বন্ধ করতে ভারত তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’
পাশাপাশি, অবিলম্বে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি এবং গাজ়ার নিপীড়িত জনগণকে সহায়তা প্রদানের জন্য যে কোনও বৈশ্বিক যৌথ প্রচেষ্টাকে সমর্থনের ডাক দিয়েছেন রইস। বিবৃতি অনুযায়ী, রইসি বলেছেন, ‘‘প্যালেস্তাইনের জনগণকে নির্বিচারে হত্যার ঘটনা বিশ্বের সমস্ত স্বাধীন দেশকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং এর প্রভাব অনেক দূর পর্যন্ত পড়বে।’’
মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় রইস গাজ়ার নিরপরাধ নারী ও শিশুদের হত্যা, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, গির্জা ও আবাসিক এলাকায় ইজ়রায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন। সূত্রের খবর, ইজ়রায়েলি হামলায় সাধারণ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদীও। সেই সঙ্গে রইসকে তিনি জানিয়েছেন, হামাসের হামলার নিন্দা করলেও নয়াদিল্লি তার পুরনো অবস্থান অনুসরণ করেই প্যালেস্তাইনের জনগণের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, মোদী ইরানের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ‘‘ভারত চায় ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।’’ দুই নেতার মধ্যে কথোপকথনের সময়, ভারত এবং ইরানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েও কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, গাজ়ায় ইজরায়েলি সেনার হামলায় নিহত প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের সংখ্যা ১০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলায় ঠিক এক মাসের মাথাতেই। স্বশাসিত প্যালেস্তিনীয় কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সোমবার বিকেলে জানানো হয়েছে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ‘জবাবে’ তেল আভিভের ধারাবাহিক আক্রমণে নিহতের সংখ্যা ১০,১২২-এ পৌঁছেছে।
প্যালেস্তিনীয় গোষ্ঠী ফাতা নিয়ন্ত্রিত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ভূখণ্ডে এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলি হামলার বলি ১৫২ জন সাধারণ নাগরিক। অন্য দিকে, হামাস এবং আর এক প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘প্যালেস্তিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ’ (পিআইজে)-এর যোদ্ধাদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ ইজরায়েলির মৃত্যু হয়েছে বলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের দাবি।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়া সফরে গিয়ে আরব দেশগুলির প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। অবিলম্বে তাঁর কাছে যুদ্ধবিরতির দাবি তুলেছে জর্ডন, মিশর, কাতার-সহ একাধিক দেশ। এই আবহে ইরানের প্রেসিডেন্ট রইসিও দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পক্ষে সওয়াল করেছেন।