হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। —ফাইল চিত্র।
যে ইরানকে তিনি সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করতেন, সেই দেশেই খুন হতে হয়েছে হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান ইসমাইল হানিয়েকে। এ বার হানিয়ের হত্যার ঘটনায় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করল ইরান সরকার। ইতিমধ্যেই দু’ডজনেরও বেশি সেনা ও গোয়েন্দা অফিসারকে গ্রেফতার করেছে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।
ইরান সরকারের কিছু শীর্ষ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে গত কাল প্রথম সারির এক আমেরিকান দৈনিক দাবি করেছিল, তেহরানে এসে মূলত যে অতিথিশালায় হানিয়ে থাকতেন, সেখানকার তিনটি ঘরে প্রায় দু’মাস আগে থেকে বোমা লুকিয়ে রেখেছিল হত্যাকারীরা। তারই একটি ঘরে বিস্ফোরণ হয়ে নিহত হন হানিয়ে এবং তাঁর এক দেহরক্ষী। এ কথা প্রকাশ্যে আসার পর পরই ইরানের গোয়েন্দা অফিসারদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা নিয়ে দেশে-বিদেশে জোর চর্চা শুরু হয়। তবে আজ আইআরজিসি-র তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, ওই অতিথিশালায় দু’মাস আগে থেকে বোমা লুকিয়ে রাখা ছিল না। বরং হামলার রাতে হানিয়ের ঘরের খুব কাছ থেকে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হত্যা করে হয়েছিল তাঁকে। তবে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা অবশ্য একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন ইরান সরকারের শীর্ষ কর্তারা। তাই হানিয়ে-হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে গত কাল থেকে দেশের গোয়েন্দা ও সেনার বেশ কিছু অফিসারকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ইরান সরকার মনে করছে, এই সমস্ত সেনা ও গোয়েন্দা অফিসারকে ‘হাত করেই’ কঠোর নিরাপত্তা বলয় এড়িয়ে সে রাতে হানিয়ের ঘরে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনের পূর্ণ মদত ছিল বলেও অভিযোগ করেছে তেহরান। তবে হানিয়ের হত্যার পরে এতগুলো দিন কেটে গেলও ইজ়রায়েল সরকার এখনও পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেনি। হামাসকে নিকেশ করা তাদের মূল লক্ষ্য বলে বারবার ঘোষণা করলেও হানিয়ে হত্যার দায়ও তারা স্বীকার করেনি।
তবে এক দিকে খাস ইরানের মাটিতে হানিয়ের হত্যা এবং প্রায় একই সঙ্গে ইজ়রায়েলি আকাশ হানায় লেবাননে হিজ়বুল্লা গোষ্ঠীর শীর্ষ কমান্ডার ফাউদ শুখরের মৃত্যুর পরে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত এবং জটিল হয়ে উঠেছে। হানিয়ের হত্যার তারা প্রতিশোধ নেবেই বলে এক যোগে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে তেহরান এবং হামাসের সামরিক বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়দের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লি। আগামী ৮ অগস্ট পর্যন্ত তেল আভিভের যাবতীয় উড়ান বাতিল করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া। এ বার বেরুটে বসবাসকারী ভারতীয়দের সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে সেখানকার ভারতীয় দূতাবাস। আপাতত ভারতীয়দের লেবাননে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে দূতাবাসের তরফে। এবং একই সঙ্গে লেবানন ছেড়ে যত দ্রুত সম্ভব ভারতীয়দের চলে যাওয়ার নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে।
আমেরিকা অবশ্য এর মধ্যেই পশ্চিম এশিয়ার জলসীমায় নিজেদের নৌবহর বাড়াতে শুরু করেছে। পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেসসচিব সাবরিনা সিংহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরান যে কোনও মুহূর্তে ইজ়রায়েল বা তার বন্ধু দেশগুলির উপরে আক্রমণ চালাতে পারে, এই আশঙ্কাতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। জানা যাচ্ছে, রণতরী ইউএসএস থিয়োডোর রুজ়ভেল্টের জায়গায় আনা হচ্ছে বিমানবাহী রণতরীর স্ট্রাইক গ্রুপ যার নেতৃত্বে থাকবে ইউএসএস আব্রাহাম লিঙ্কন। আমেরিকান প্রতিরক্ষাসচিব লয়েড অস্টিন আরও অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক ব্যবস্থা মজুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে যে কোনও পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন অস্টিন।
হানিয়ের হত্যার পরে তাঁর জায়গায় হামাসের রাজনৈতিক প্রধানের পদে কে বসবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার কিছু সংবাদমাধ্যমে মূলত পাঁচটি নাম ঘোরফেরা করছে। খলিল আল-হায়া, মাসা আবু মারজ়ুক, জ়াহের জাবারিন, খালেদ মেশাল ও ইয়াহয়া সিনওয়ারের মধ্যেই কেউ এক জন হানিয়ের গদিতে বসতে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।