প্রবল বিক্ষোভের মুখে হিজাব নিয়ে পিছু হটার ইঙ্গিত ইরানের। ছবি- রয়টার্স।
হিজাব আইন নিয়ে পিছু হটার ইঙ্গিত দিল ইরান। দু’মাসের হিজাব-বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলনের পর সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ জাফর মোন্টাজ়েরি বলেছেন, “হিজাব আইনে কোনও পরিবর্তন করা যায় কি না, তা যৌথ ভাবে খতিয়ে দেখছে আইন এবং বিচারবিভাগ।” সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে এই তথ্য জানা গিয়েছে। তবে হিজাব আইনে ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন আনা হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, গত বুধবার সংসদের সাংস্কৃতিক কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছেন দুই বিভাগের যৌথ প্রতিনিধি দল। হিজাব আইনে পরিবর্তনের বিষয়ে তাঁদের মধ্যে বিস্তারিত কথা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
গত শনিবারই দেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি জানিয়েছিলেন ইরানের সাধারণতন্ত্র এবং ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলি সাংবিধানিক ভাবে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, দেশের সংবিধানে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বদল আনা সম্ভব। প্রেসিডেন্টের এই বার্তার মধ্যেই সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত ছিল বলে অনেকে মনে করেছিলেন। তবে গোঁড়া এবং রক্ষণশীল ইসলামিক শাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন ইরানে হিজাব আইন কতটা শিথিল করা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
গত দু’মাস ধরেই হিজাব-বিরোধী আইনে উত্তাল হয়েছে ইরান। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের কুর্দ অঞ্চলের বাসিন্দা, ২২ বছরের তরুণী মাহশা আমিনিকে আটক করে সে দেশের নীতি পুলিশ। মাহশার অপরাধ ছিল, তিনি ঠিক করে হিজাব পরেননি। পুলিশি হেফাজতেই রহস্যজনক ভাবে মাহশার মৃত্যু হয়। তার পরই তেহরান-সহ ইরানের বিভিন্ন শহর এবং শহরাঞ্চলে হিজাব খুলে, চুল কেটে রক্ষণশীল ইসলামিক শাসনের বিরুদ্ধে সরব হন সে দেশের মেয়েরা।
প্রতিবাদের রেশ গিয়ে পৌঁছয় ফুটবলের ময়দানেও। বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে গলা মেলাননি সে দেশের খেলোয়াড়রা। গ্যালারিতেও দেখা যায়, মাহশা আমিনির নাম লেখা জার্সি পরে নীরবে প্রতিবাদ দেখিয়ে যাচ্ছেন সে দেশের তরুণীরা। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এ নিয়ে রীতিমতো কোণঠাসা হতে হয় ইরানকে। এত দিনে হিজাব নিয়ে নিজেদের নিশ্চল অবস্থান থেকে সরার ইঙ্গিত দিল তেহরান প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের পর সে দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিটি মেয়েকে বাধ্যতামূলক ভাবে হিজাবে মাথা ঢাকতে হয়। হিজাব না পরলে, এমনকি ঠিক ভাবে না পরলেও সে দেশের সেনা, নীতি পুলিশ এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে।