এক সময় ম্যানহাটন ওয়াল স্ট্রিটের ‘তিমি’ বলা হত তাঁকে। এমন একজন বিনিয়োগকারী কখনও ভুল করতে পারেন না, তাঁর সম্পর্কে এমনই ধারণা ছিল।
সেই ধারণাই ভেঙে যায় ২০২১ সালে। ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তিনি। মাত্র দু'দিনে দুই হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয় তাঁর। এত কম সময়ে এত বড় ক্ষতির উদাহরণ ইতিহাসে প্রথম।
তিনি বিল হোয়াং। বিশাল অঙ্কের টাকা খুইয়ে এখন অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করছেন বিল।
বিলের জন্ম কোরিয়ায়। পরবর্তীকালে নিউ ইয়র্কে থাকতে শুরু করেন তিনি। নিউ ইয়র্কেরই খ্যাতনামী বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছিলেন খুব অল্প সময়ে।
অর্থনীতিতে স্নাতক হওয়ার পর বিল নিউ ইয়র্কের হুন্ডাই সিকিউরিটিজ-এ প্রথমে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর পেরেগ্রিন নামে অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছিলেন। পেরেগ্রিনে কাজ করার সময় তাঁর পরিচয় হয়েছিল জুলিয়ন রবার্টসন নামে এক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে।
পরে জুলিয়নের সংস্থাতেই বিল যোগ দেন এবং জুলিয়নের অনুপ্রেরণাতেই নিজস্ব সংস্থা গড়ে তোলেন।
২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে বিলকে টাইগার এশিয়া ম্যানেজমেন্ট সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন জুলিয়নই।
২০১২ সালে টাইগার এশিয়া বন্ধ করে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আর্কিগস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
২০২১ সালে তাঁর এই সংস্থাই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আর্কিগসের জন্য ১০ হাজার কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ে তা শোধ দিতে পারেননি। মাথার উপর 'ঋণ খেলাপি' তকমা লাগার পরই বিপর্যয় নেমে আসে তাঁর জীবনে।
মাত্র দু’দিনে দু'হাজার কোটি ডলার খোয়াতে হয় তাঁকে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বিলের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আর্কিগসের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ ওই বিপুল পরিমাণ ক্ষতির পরও যে সম্পত্তি রয়ে গিয়েছে, তাতে এখনও নির্দ্বিধায় বিলাসিতায় গা ভাসাতে পারেন তিনি।
এই বিশাল সম্পত্তির মালিকের জীবনযাত্রাও বিলাসবহুল হওয়ার কথা ছিল। দামি পোশাক, একাধিক বাড়ির সামনে বিলাসবহুল গাড়ির সারি-- এ ছবিই যেন ভেসে ওঠে বিলের প্রসঙ্গ উঠলে।
বাস্তবের ছবিটা কিন্তু একেবারেই আলাদা। বিল যথেষ্ট সাধারণ ভাবে জীবন কাটাচ্ছেন। নিউ জার্সির যে বাড়িতে তিনি থাকতেন, আজও সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি। খুব একটা বাড়ির বাইরে বার হন না।
হাডসন নদীর উপর গড়ে ওঠা প্যালিসেডস ক্লিফ নামে তাঁর বাড়ির বাইরে গাড়ির সারি দেখা যায় না। এক পাশে শুধু দাঁড়িয়ে থাকে তাঁর সাধের কালো রঙের মার্সিডিজটি।
ওয়াল স্ট্রিটের ‘তিমি'র এই জীবনযাপন দেখে অনেকেই অবাক হন। কিন্তু সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ বিল। তিনি আসলে বরাবরই সাধারণ ভাবে জীবন কাটাতে ভালবাসেন। তাই কোনও দিন খুব বেশি বিলাসিতায় গা ভাসাননি। বিলের মেলামেশাও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠবৃত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিল যে জায়গায় নিজের বাড়ি করেছেন, সেটিও তাঁর মতো বিত্তবানদের এলাকা হিসাবে চিহ্নিত নয়। ওয়াল স্ট্রিটের ‘তিমি’ হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই এই বাড়িতেই থাকেন তিনি।