গত ২৬ মার্চ বল্টিমোরের ফ্রান্সিস স্কট কি সেতুতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মেরেছিল পণ্যবাহী জাহাজ এম ভি ডালি। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার পূর্ব উপকূলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বাল্টিমোর। মার্চ মাসে সেখানেই জাহাজের ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল একটি সেতু। ঘাতক জাহাজটিতে ২০ জন ভারতীয় এবং এক জন শ্রীলঙ্কার নাগরিক ছিলেন। সেই ঘটনার পর প্রায় দু’মাস অতিক্রান্ত। এখনও ডাঙায় আসতে পারেননি তাঁরা। জলে জাহাজের মধ্যেই আটকে আছেন।
গত ২৬ মার্চ বাল্টিমোরের গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়েছিল। তাতে মৃত্যু হয় ছ’জনের। সেই থেকে ওই বন্দর এলাকায় জাহাজ যাতায়াতও প্রায় স্তব্ধ হয়ে আছে। সিঙ্গাপুরের ওই মালবাহী জাহাজে কর্মরত ছিলেন ২০ ভারতীয়। জাহাজটির নাম এম ভি ডালি। এখনও এম ভি ডালিকে জল থেকে সরানো সম্ভব হয়নি।
৯৮৪ ফুট উঁচু জাহাজ ডালির ধাক্কায় মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে পড়েছিল ২.৬ কিলোমিটার লম্বা সেতুটি। প্যাটাপস্কো নদীর উপর ওই সেতুর নাম ফ্রান্সিস স্কট কী ব্রিজ। সেতুটি ভেঙে পড়ার পর থেকে ওই এলাকায় যাতায়াতে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রেসিডেন্ট বাইডেন দ্রুত সেতু পুনর্নিমাণের আশ্বাস দিয়েছেন।
কী ভাবে ভেঙে পড়ল জাহাজটি, তার তদন্ত চলছে আমেরিকায়। জাহাজের মধ্যেকার কারও গাফিলতি এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই তদন্তের স্বার্থেই এখনও জাহাজের মধ্যে আটকে আছেন কর্মীরা। আমেরিকার ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফ্টি বোর্ড (এনটিএসবি) তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে। তদন্তের স্বার্থে আটকে দেওয়া হয়েছে জাহাজের কর্মীদের ভিসাও।
গ্রেস ওসান প্রাইভেট লিমিটেডের জাহাজ ডালি। ওই সংস্থার মুখপাত্র জিম লরেন্স সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, জাহাজের মধ্যে ভাল অবস্থাতেই রয়েছেন ভারতীয়েরা। তাঁরা তদন্তে সহযোগিতাও করছেন।
তদন্তে এখনও পর্যন্ত যা উঠে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, সেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের কয়েক মুহূর্ত আগে জাহাজটি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সংঘর্ষের কারণ নিয়ে যা ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। এপ্রিল মাসে এফবিআইয়ের কর্তারা জাহাজে গিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে আসেন। সে সময়ে জাহাজের কর্মীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনও নিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরে তাঁদের অস্থায়ী সিম কার্ড দেওয়া হয়েছে। তবে তাতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এ সবই তদন্তের অংশ বলে দাবি করেছে আমেরিকান তদন্তকারী সংস্থা।
এনটিএসবি জানিয়েছে, জাহাজটি যখন সেতু থেকে ০.৬ মাইল দূরে ছিল, তখন প্রথম বার সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জাহাজের পরিবহণ নাবিকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল সে সময়ে। এর পর কিছু ক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা গিয়েছিল। কিন্তু তত ক্ষণে জাহাজটি সেতুর অনেক কাছাকাছি চলে এসেছিল। জাহাজ এবং সেতুর দূরত্ব যখন কমে ০.২ মাইলে পৌঁছয়, সে সময়ে সেটি আবার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তদন্ত শেষ হলে কবে জাহাজ থেকে ডাঙায় পা রাখতে পারবেন কর্মীরা, কবেই বা তাঁরা দেশে ফিরতে পারবেন, সেই আশায় দিন গুনছেন তাঁদের নিকটজনেরা।