ছবি: সংগৃহীত।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে গোটা দেশ এখন প্রতিবাদে উত্তাল। আর এ নিয়েই ভারত-সহ বিশ্বের দৃষ্টি এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টের দিকে। আগামী বুধবার বিষয়টি নিয়ে ৭৫১ জন সদস্যের এই পার্লামেন্টে আলোচনা হওয়ার কথা। তার পরের দিন ভোটাভুটি। সূত্রের খবর, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যে ছ’টি প্রস্তাব তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে বেশির ভাগই সমালোচনা করেছে সিএএ-র। পাশাপাশি, যে ভাবে ভারতে সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদকে দমন করা হচ্ছে, তাকেও ‘অমানবিক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে অধিকাংশ প্রস্তাবে।
বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে বিদেশ মন্ত্রক। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি তারা। তবে ঘরোয়া ভাবে জানানো হয়েছে, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’। সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই আইন পাশ করানো হয়েছে। যাঁরা প্রস্তাব আনছেন তাঁদের আরও এগোনোর আগে পূর্ণাঙ্গ এবং নিখুঁত বিশ্লেষণের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করার বার্তাও দিচ্ছে নয়াদিল্লি। তবে বিদেশ মন্ত্রক মুখ না খুললেও আজ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বিষয়টি নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন ইইউ-কে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের সরকার আইনটি বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ওঁদের কাছে। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একটি পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই। ইইউ পার্লামেন্টের মাননীয় বন্ধুরা পাকিস্তানে নিপীড়িত শিখ এবং হিন্দুদের নিয়ে কখনও কোনও প্রশ্ন তুলেছেন কি?’’
ইইউ পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী ইপিপি (ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি)-র বক্তব্য, ‘সিএএ বৈষম্যমূলক এবং অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠী যে সুবিধাভোগ করে থাকে, তা থেকে মুসলিমদের বঞ্চিত করার জন্য এই আইনটি তৈরি। এটি ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতাবস্থার পক্ষেও নেতিবাচক।’ তাদের আনা প্রস্তাবের বক্তব্য, ‘বিদেশে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্য এক ধরনের আইন আর দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য অন্য আইন করায় বৈষম্য তৈরি হবে। ভারতের উচিত এই আইনকে বৈষম্যহীন ভাবে দেখা।’ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদ থামাতে সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় বিক্ষোভ
বিষয়টি নিয়ে ইইউ পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মারিয়া সাসোলিকে চিঠি লিখেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, এই আইন কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। বরং পড়শি দেশের অত্যাচারিত সংখ্যালঘুরা যাতে নাগরিকত্ব পান, তাই এই আইন। ইইউ-এর প্রতি তাঁর আর্জি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে আইন পাশ হয়েছে, অন্য গণতান্ত্রিক দেশেরও উচিত তাকে সম্মান জানানো।