ক্ষতবিক্ষত ইমরান খানের টুইটার-দেওয়াল।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যে লাইন ক’টি কবি খলিল জিব্রানের লেখা বলে উদ্ধৃত করেছেন, সেগুলির স্রষ্টা আসলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’
এটি নিতান্ত নির্বিষ উদাহরণ। আরও আছে— ‘ইমরানের খানের নতুন মণিমুক্তো!’ এক পাকিস্তানিই তীব্র কটাক্ষে লিখছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জানি আপনার নির্বাচিত হওয়ার নেপথ্যে হোয়াটসঅ্যাপের বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু অনলাইনে যা পাবেন, তা-ই দুম করে ফরোয়ার্ড করে বসবেন না।’ কেউ কেউ তুলে দিচ্ছেন লিঙ্ক। যাতে ক্লিক করলে কম্পিউটার স্ক্রিনে ফুটে উঠছে কবিগুরুর মুখ। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ওই ক’টি লাইন। ছবি-লেখায় ডিজিটাল কার্ড। একাধিক।
তিনটি ইংরেজি বাক্য আজ টুইট করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ‘আই স্লেপ্ট অ্যান্ড আই ড্রিমড দ্যাট লাইফ ইজ় অল জয়। আই ওক অ্যান্ড আই স’ দ্যাট লাইফ ইজ় অল সার্ভিস। আই সার্ভড অ্যান্ড আই স’ দ্যাট সার্ভিস ইজ় জয়।’ সঙ্গে লেবানিজ- মার্কিন কবি জিব্রানের মুখ। ইমরান লিখেছেন, ‘খলিল জিব্রানের এই শব্দগুলির গভীরতা যাঁরা সন্ধান ও উপলব্ধি করেন, পরিতৃপ্তির জীবন তাঁরাই বাঁচেন।’
ইমরানের উদ্ধৃত লাইনগুলির বঙ্গানুবাদ অনেকটা এ রকম— ‘‘ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলাম, জীবন মানেই আনন্দ। জেগে উঠে দেখলাম, জীবন মানেই কাজ। কাজ করে দেখলাম, কাজই আনন্দ।’’ কিন্তু গুগল-এ খুঁজলে রবীন্দ্রনাথ এবং জিব্রান— দু’জনের নামের সঙ্গেই উঠে আসছে ওই একই উদ্ধৃতি। সেখানে কবিগুরুর নামই বেশি। তবে এ-ও দেখা যাচ্ছে, গত বছরের জুনে ওয়াশিংটনে জিব্রানের নামাঙ্কিত একটি সাহিত্য পুরস্কার সভার প্রথম বক্তৃতাই শুরু হয়েছিল ওই উদ্ধৃতি দিয়ে। বক্তা বলেছিলেন, উদ্ধৃতিটি জিব্রানের।
রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞেরা কেউ কেউ বলছেন, রবীন্দ্রনাথ ও জিব্রানের কবিতার কিছু কিছু লাইন আছে যা একই রকম। কথার ধরন এক, কিন্তু রয়েছে সূক্ষ্ম প্রভেদ, যা বোঝা যায়। কিন্তু ইমরান যে লাইনগুলি টুইট করেছেন, সেগুলি অন্তত এখনও পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের রচনার কোনও সংকলনে পাওয়া যায়নি। দু’এক জন আবার এই উদ্ধৃতির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের জীবন-সায়াহ্নে লেখা একটি কবিতার ছায়া দেখেছেন। ‘রূপনারানের কূলে/ জেগে উঠিলাম,/ জানিলাম এ জগৎ/ স্বপ্ন নয়।... আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,/ সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে...’।
মিল নামমাত্রই। তাতে অবশ্য ইমরানের অস্বস্তি কাটেনি। দুই প্রতিবেশী দেশের নেতারা কী ভাবে নিয়মিতই ইতিহাস-ভূগোল-সাহিত্য গুলিয়ে ফেলেন, সেই উদাহরণ টেনে রসিকতা চলেছে রাত পর্যন্ত।