পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
সরকার সামলানোর গুরুত্বপূর্ণ ‘ম্যাচে’ খাতায়কলমে তাঁর হাতে সময় রয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান আহমেদ খান নিয়াজির টিম রাজনীতির ক্রিজে কত ওভার টিকে থাকতে পারবে, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন সেটাই। পাকিস্তান রাজনীতিতে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বিরোধী জোট ‘পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট’ (পিডিএম) এবং তাদের ধারাবাহিক সরকারবিরোধী আন্দোলন। তারই জেরে মেয়াদ ফুরনোর প্রায় তিন বছর আগেই প্রবল চাপে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আর তাঁর সরকার।
বস্তুত, ইমরানকে সরাতে রীতিমতো কোমর বেঁধেছে পাকিস্তানের ১১টি রাজনৈতিক দল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল (এন) এবং নিহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাবলের পিপিপি তো আছেই, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও ৯টি দল। গত মাসেই জোট তৈরি হয়েছিল। এক-একটি শহরে কর্মসূচি করে তারা ইমরান সরকারকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করে চলেছে।
ঘটনাচক্রে, ইমরানের প্রতিষ্ঠিত দলের নাম পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। মানে ‘ন্যায়বিচারের দল’। যে দলের জুলুমবাজি থেকে রক্ষা পেতে আজ এক মঞ্চে মরিয়ম-বিলাবলেরা।
পাক পঞ্জাবের রাজধানী লাহৌরের কাছে গুজরানওয়ালায়, সিন্ধু প্রদেশের করাচির জিন্না স্টেডিয়ামে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ জনতার সমাবেশ করেছে বিরোধীরা। ইমরানের পাশাপাশি তাঁর ঘনিষ্ঠ সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধেও উঠেছে ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগান। এমনকি, পাক ক্রিকেটার-রাজনীতিকের ‘রক্তচাপ’ বাড়িয়ে পুলিশ-সহ সরকারি কর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন সরকার ও সেনার বিরুদ্ধে। বাণিজ্য শহর করাচি জ্বলছে। বুধবার সেখানে এক বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
৬৮ বছরের ইমরানের পক্ষে এ বারের লড়াই বেশ কঠিন বলে জানাচ্ছে পাক সংবাদমাধ্যমের বড় অংশ। ২০১৮ সালের অগস্টে হেলায় পাক রাজনীতির তিন দশকের পিএমএল (এন)-পিপিপি মেরুকরণ উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ভোটের ফলাফল বলেছিল, বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট অধিনায়কের নতুন পাকিস্তান গড়ার স্লোগানে ভরসা রেখেছিল আমজনতা। কিন্তু গত দু’বছরেপাক অর্থনীতির অধোগতি এবং সেনার প্রভাববৃদ্ধি ঘিরে ক্রমশ অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। তারই সুযোগ নিচ্ছে বিরোধীরা। আর তা দমন করতে গিয়ে আরও চাপে পড়ছেন খানসাব।
আরও পড়ুন: তিনটি বিবাহ। বহু প্রেম। বর্ণময় ইমরান খানের আগামী কি সাদা-কালো
আরও পড়ুন: আইজি ‘অপহরণে’ তপ্ত করাচি, সংঘাতে পাক সেনা ও পুলিশ
অনেকেই মনে করেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ইমরান আমজনতার ‘মুড’ আঁচও করতে পারছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে বিরোধীদের আন্দোলনের চাপে নতিস্বীকার করার বদলে প্রত্যাঘাতের রাজনীতির পথেই হাঁটতে চান তিনি। সেই ভাবনা থেকেই গদিচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শরিফকে দেশে ফিরিয়ে জেলে ভরতে সক্রিয় হয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে চিকিৎসাধীন শরিফের ভিসা বাতিল করে তাঁকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পটেলকে চিঠিও পাঠিয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু শরিফের জামাই মহম্মদ সফদরের গ্রেফতারির জন্য পাক সেনা সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধান (আইজি)-কে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ ওঠার পরে ফের কিছুটা ব্যাকফুটে ইমরান। এমনকি, ইমরান-ঘনিষ্ঠ সেনাপ্রধান বাজওয়াকে পরিস্থিতি সামলাতে তদন্তের ঘোষণাও করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু, তবে বন্ধ হচ্ছে না অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ট্রায়াল
অভিজাত পাশতুন পরিবারের সন্তান ইমরানের জীবনে সাফল্য এসেছে তাঁর চাহিদামতো। ১৩ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করে মাত্র ১৮-তেই জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য হয়েছিলেন। পেয়েছেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘হিলাল-ই-পাকিস্তান’। এমনকি, ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে নতুন দল গড়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। পাক সেনা এবং আইএসআইয়ের সঙ্গে বার বার তাঁর ‘গোপন যোগাযোগের খবর’ মিডিয়ায় এলেও তাকে পাত্তা দেননি। এবার কিন্তু পরিস্থিতি তাঁর অনুকূল নয়। ক্রিকেটজীবনের ক্যারিশমা তাঁকে বহুবার হারা ম্যাচ জিতিয়েছে। রাজনীতির এই ম্যাচ তিনি বাঁচাতে পারবেন কি? তামাম পাকিস্তান তাকিয়ে আছে ‘হিলাল-ই-পাকিস্তান’-এর দিকে।