প্রতীকী ছবি।
ক্রমেই ভোল বদলাচ্ছে করোনাভাইরাস। এ বার ভারতীয় স্ট্রেন ও ব্রিটেন স্ট্রেনের হাইব্রিড নতুন একটি ভ্যারিয়্যান্ট চিহ্নিত করল ভিয়েতনাম। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুয়েন থান লং আজ জানিয়েছেন, নতুন মিশ্র ভ্যারিয়্যান্টটি বাতাসে ভেসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। অন্য ভ্যারিয়্যান্টগুলির থেকে অনেক বেশি সংক্রামক।
গোড়া থেকেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছিল ভিয়েতনাম। এ পর্যন্ত মোট সংক্রমণ মাত্র ৬,৩৯৬। মারা গিয়েছেন ৪৭ জন। বাড়াবাড়ি তেমন হয়নি। কিন্তু এ বছরের এপ্রিল থেকে ছবিটা ভিন্ন। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। ছোট্ট দেশটায় মোট সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি (৩৬০০ জন) হয়েছে এপ্রিল মাসে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নুয়েন বলেন, ‘‘আমরা জিন সিকোয়েন্সিং করছিলাম। তাতে এক করোনা রোগীর দেহে এমন একটি স্ট্রেন মিলেছে, যেটি ভারতীয় ও ব্রিটেন স্ট্রেনের মিশ্রণ। আরও ভেঙে বললে, এটি আসলে ছিল ব্রিটেন স্ট্রেন। তার সঙ্গে মিশেছে ভারতীয় স্ট্রেন।’’ ভিয়েতনামের একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে লেখা হয়েছে, খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ভাবে স্ট্রেনটি সম্পর্কে ঘোষণা করবে সরকার।
এ পর্যন্ত সাতটি স্ট্রেন চিহ্নিত হয়েছে ভিয়েতনামে। বি.১.২২২, বি.১.৬১৯, ডি৬১৪জি, বি.১.১.৭ (ব্রিটেন স্ট্রেন), বি.১.৩৫১, এ.২৩.১ এবং বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্ট)। নতুন মিশ্র ভ্যারিয়্যান্ট সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে— অন্য স্ট্রেনগুলির থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। খুব তাড়াতাড়ি প্রতিলিপি (রেপ্লিকেটেড) গঠন করতে পারে এটি। নুয়েনের কথায়, ‘‘এই কারণের দেশের বিভিন্ন অংশে অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এটি।’’
অতিসংক্রামক বি.১.৬১৭ স্ট্রেনটি প্রথম ধরা পড়ল পাকিস্তানে। এপ্রিল মাস থেকেই প্রতিবেশি ভারত থেকে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল পাকিস্তান। তার পরেও সংক্রমণ আটকালো গেল না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মে মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে সংগৃহীত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রকাশ করে পাকিস্তান জানিয়েছে বি.১.৬১৭ সংক্রমণের কথা। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে সাতটি বি.১.৩৫১ (দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেন) এবং একটি বি.১.৬১৭.২ (ভারতীয় স্ট্রেন) ধরা পড়েছে।
ভাইরাসের এ হেন ভয়াবহ মিউটেশন, নতুন নতুন স্ট্রেন তৈরি ও সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মুখে একমাত্র আশা টিকাকরণ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা পরের ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে ছোটরা। আমেরিকা ও কানাডায় ইতিমধ্যেই কিশোর-কিশোরীদের টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-ও ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সিদের জন্য ফাইজ়ার-বায়োএনটেকের কোভিড প্রতিষেধকটিকে ছাড়পত্র দিল। টিকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি’ (ইএমএ) জানিয়েছে, ট্রায়ালে টিকা নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি এই বয়সিদের। তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেলেনি। জার্মানি এর মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, সামনের মাস থেকে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে। ইইউ-এর স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কাইরিয়াকাইডস বলেন, ‘‘অতিমারিকে বিনাশ করার দিকে আরও ধাপ এগোলাম আমরা।’’ তবে টিকাকরণকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। মা-বাবারাই সিদ্ধান্ত নেবেন, সন্তানকে টিকা দেওয়া হবে কি না।