৬ দিন বন্ধ থাকার পর সুয়েজ খাল খোলা সম্ভব হয়েছে সম্প্রতি। একটি মালবাহী জাহাজ আটকে পড়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল এশিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার সংক্ষিপ্ততম এই জলপথ।
আচমকাই থমকে গিয়েছিল ২ মহাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান। বহু চেষ্টার পর ফের তা চালু হয়।
মানুষের তৈরি বিশ্বের ব্যস্ততম খাল সুয়েজ। ইউরোপ থেকে জলপথে এশিয়া পৌঁছনোর ‘শর্টকাট’ বলা চলে সুয়েজকে। ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে লোহিত সাগরকে জুড়েছে এই খাল।
এই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো থমকে গিয়েছিল ইউরোপ এবং এশিয়ার বাণিজ্য। দৈনিক ৯০০ কোটি টাকার ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছিল ২ মহাদেশের বাণিজ্যমহলকে।
সম্প্রতি সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে পড়ায় ফের একবার ফিরে যেতে হয়েছিল ইতিহাসে। সুয়েজ খালের সঙ্গে ভারতের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বাণিজ্য ক্ষেত্রে। কিন্তু জানেন কি সুয়েজ খালের সৌজন্যেই এক সময় মুম্বইয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল যৌন ব্যবসা।
১৮৫৯ থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত লাগাতার পরিশ্রমে তৈরি হয়েছিল এই খাল। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এই জলপথ তৈরির আগে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় কোনও জাহাজ আসতে গেলে উত্তর আটলান্টিক সাগর হয়ে আফ্রিকা বরাবর ভারত মহাসাগর হয়ে পৌঁছতে হত। তাতে সময় লাগত অনেক বেশি।
ইউরোপ মহাদেশ থেকে আগত জাহাজগুলির কাছে ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত মুম্বই নোঙর করার জন্য সবচেয়ে পছন্দের বন্দর হয়ে ওঠে। সে কারণে মুম্বই হয়ে ওঠে ভারতের প্রবেশদ্বার। মুম্বই থেকে রেলপথে দেশের অন্যান্য অংশে যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
মুম্বইবাসীর জীবনযাত্রার মধ্যে বড় ফারাক হতে শুরু করে। ইউরোপের দেশগুলি থেকে মুম্বইয়ে ক্রমে জাহাজের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্রমে ইউরোপিয়ান জাহাজের যাতায়াত নিয়মিত হয়ে ওঠে এবং এর হাত ধরে মুম্বইয়ে আরও একটি ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে।
সেটি হল যৌনপল্লির ব্যবসা। এর আগে ভারতীয়রা ইউরোপের যৌন ব্যবসা সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতেন না। কিন্তু জাহাজের নিয়মিত যাতায়াত শুরু হওয়ার সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যৌনকর্মীরা মুম্বইয়ে আসতে শুরু করেন।
১৯ শতকের শেষের দিকে ভারতের মধ্যে মুম্বই এমন একটি শহরে পরিণত হয় যেখানে দেশের সবচেয়ে বেশি ইউরোপীয় যৌনকর্মীর দেখা মিলত।
অসংখ্য পতিতালয় গড়ে উঠেছিল মুম্বইয়ে। সবচেয়ে বেশি ছিল মুম্বইয়ের গ্র্যান্ট রোডে। সেখানে শুক্লজি স্ট্রিট রাস্তাটির নামই হয়ে গিয়েছিল ‘সফেদ গলি’ কিংবা ‘হোয়াইট লেন’। মূলত ব্রিটিশ সেনা এবং নাবিকদের বিনোদনের আখড়া হয়ে উঠেছিল ওই এলাকা।
সারা বিশ্বের জলপথে বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ শিপিং কন্টেনার এই খাল দিয়েই যাতায়াত করে। এই খাল দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাল রফতানি করে রাশিয়া এবং সৌদি আরব। ভারত এবং চিন সবচেয়ে বেশি মাল আমদানি করে এই পথ দিয়ে।