গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কুলভূষণ যাদব নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন। শেষ পর্যন্ত, বুধবার দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ধাক্কা খেতে হয়েছে পাকিস্তানকে। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে ইসলামাবাদকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই রায় নিয়ে উল্লসিত নয়াদিল্লি। কিন্তু, ওয়াঘার ওপারে গোটা বিষয়টির উল্টো ছবিই তুলে ধরছে পাক সংবাদ মাধ্যম।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একে সে দেশের জয় বলে দাবি করেছেন। কারণ কুলভূষণকে বেকসুর খালাস করার কোনও নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালত দেয়নি। তবে ইমরানের থেকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে কুলভূষণ যাদব নিয়ে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক জয়গানই গাইছে পাক মিডিয়া।
দুই প্রতিবেশীর পক্ষে স্পর্শকাতর এই মামলার রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। ওই রায়ের দিকে তাকিয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলও। তা নিয়ে ‘পাকিস্তান টুডে’ ওয়েবসাইটের শিরোনাম, ‘কুলভূষণ যাদবকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ভারতের দাবি খারিজ করেছে আইসিজে।’ ওয়েবসাইটটির দাবি, ‘আইসিজে-র রায়ে বলা হয়েছে, কুলভূষণ যাদবকে শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া কখনই ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করে না। কোর্টে ভারতের সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত ভারতের সমস্ত দাবিই খারিজ করেছে।’
আরও পড়ুন: ‘কুলভূষণকে ভারতের হাতে তুলে দিতে বলেনি আন্তর্জাতিক আদালত’, টুইটে ইমরান
‘এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ নামে ওয়েবসাইটে কুলভুষণকে নিয়ে আটটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘কুলভূষণের দেশে ফেরা নিয়ে সমস্ত ভারতীয়র আশা বিনষ্ট হয়েছে।’ পাক সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুরকে উল্লেখ করে ওয়েবসাইটটি আবার লিখেছে, ‘সেনা আদালতের রায় মান্যতা পেল।’ পাক টিভি চ্যানেল এআরওয়াই নিউজে পাক সেনা মুখপাত্র আসিফ গফুরের দাবি, ‘আইসিজে-র এই রায় ভারতের কাছে আর একটি ২৭ ফেব্রুয়ারির মতো।’ প্রসঙ্গত, বালাকোটে এয়ারস্ট্রাইকের পর দিন অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি, পাল্টা বিমানহানা চালায় ইসলামাবাদ। সে সময়, পাক সেনার হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান।
পাকিস্তানের দৈনিক সংবাদপত্র ‘দ্য নিউজ’-এ রায়ের অংশ তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ‘আইসিজি-র রায়ে কুলভূষণের মুক্তি বা তাঁর পুনর্বিচারের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আইসিজে-র মত, কুলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের যোগাযোগ না থাকায় (কনস্যুলার অ্যাকসেস) ভিয়েনা চুক্তিভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু, তাঁকে শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় তা হয়নি।’ পাক সংবাদপত্র ‘ডন’ লিখেছে, ‘যাদবকে দেশে ফেরাতে ভারতের আবেদন খারিজ, কনস্যুলার অ্যাকসেসের অনুমতি আইসিজে-র।’
কুলভূষণ রায়ে নজর ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেরও। সেখানে অবশ্য আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ লিখেছে, ‘চরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানে বন্দি ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত।’ প্রায় একই ধাঁচের শিরোনাম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এও। ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’ লিখেছে, ‘চরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানে বন্দি ভারতীয়ের মৃত্যুদণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক আদালতের।’
আরও পড়ুন: কুলভূষণ মামলায় জিতল ভারতই, মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনা করতে বলল আন্তর্জাতিক আদালত, বিপাকে পাকিস্তান
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভিন্নধর্মী শিরোনাম আরব সংবাদমাধ্যম ‘গাল্ফ নিউজ’ ও ‘দ্য খালিজ টাইমস’-এর রিপোর্টগুলিতে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘পাকিস্তানকে কুলভূষণ রায় পুনর্বিবেচনার নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের, রদ মৃত্যুদণ্ডও।’