জুনে লকডাউন পুরোপুরি উঠে যাওয়ার কথা থাকলেও ডেল্টা স্ট্রেনের দাপটে ব্রিটেনে ফের বন্দিদশার মেয়াদ বেড়েছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং করোনা-বিধি আলগা করার দাবিতে লন্ডনের রাস্তায় বিক্ষোভ। রবিবার। রয়টার্স
করোনার ডেল্টা স্ট্রেনকে রোখার ক্ষমতা টিকার নেই। কিন্তু সংক্রমণ ও তার পর হাসপাতালে ভর্তির মাঝের সুতোটাকে ছিঁড়ে দিতে পারে প্রতিষেধক। তাই অবিলম্বে টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা প্রয়োজন। এমনটাই জানাচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ
পিটার হরবি।
ডেল্টা স্ট্রেনের জেরে ব্রিটেনে দৈনিক সংক্রমণ ফের বেড়েছে। নতুন করে করোনা-বিধি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে সরকার। ২১ জুন লকডাউন সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার কথা ছিল ব্রিটেনে। সেই সিদ্ধান্তও বাতিল করা হয়েছে। এক মাস বাড়ানো হয়েছে বন্দিদশা। সেই সঙ্গে টিকাকরণের গতি আরও বাড়িয়েছে প্রশাসন। কারণ অতিমারির সঙ্গে লড়তে একমাত্র অস্ত্র প্রতিষেধক। হরবি বলেন, ‘‘অনেকেই বলছেন, টিকা নিয়েও তো সংক্রমণ ঘটছে। সেটা সত্যি। কিন্তু
লক্ষ্য করে দেখুন, সংক্রমণ বেড়েছে। হাসপাতালে ভর্তি কিন্তু তেমন বাড়েনি। প্রতিষেধকের জন্যই সুফল মিলছে। সংক্রমণ ঘটলেও বাড়াবাড়ি হচ্ছে না।’’
সরকার-পক্ষ থেকে লকডাউন তুলে দেওয়ার জন্য নতুন দিন শোনা যাচ্ছে ১৯ জুলাই। তবে সরকারি উপদেষ্টা হরবি বলছেন, ‘‘আমরা ডেট নয়, ডেটা দেখছি। তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত।’’
ব্রিটেনে কড়াকড়ি করা হলেও ইউরোপের বহু দেশে বাসিন্দাদের করোনা-বিধি থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জার্মানিতে যেমন, রাস্তাঘাটে মাস্ক পরা আর বাধ্যতামূলক নেই। পর্যটন খুলে দেওয়া হয়েছে। কাফে, রেস্তরাঁ, এমনকি চিড়িয়াখানাও খুলে দেওয়া হয়েছে বহু দেশে। এ বিষয়ে হরবির সতর্কবার্তা— ‘‘ডেল্টা স্ট্রেন মারাত্মক সংক্রামক। এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও, আমার ধারণা খুব শিগগিরি গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়বে ডেল্টা।’’
ইতিমধ্যেই ৮৫টি দেশে চিহ্নিত হয়েছে ডেল্টা। আফ্রিকাতেও ছড়াতে শুরু করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এত দিন মূলত সংক্রমণ ঘটছিল করোনার বিটা স্ট্রেনে। এটিকে ‘দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেন’ও বলা হচ্ছিল। কিন্তু ক্রমশ এটিকে সরিয়ে জায়গা দখল করছে ডেল্টা। রাশিয়াতেও সংক্রমণ বেড়েছে মারাত্মক। ১ জুন এক দিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৫০০ জন। এখন সেটা দ্বিগুণ। শনিবার দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ২১,৬৬৫। শুক্রবার এক দিনে মৃত্যু হয়েছে ৬১৯ জনের। সরকারি সূত্রের খবর, এটি এ বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানী মস্কো।
ওমান থেকে ইন্দোনেশিয়া, সংক্রমণ বাড়ছে সর্বত্র। ইন্দোনেশিয়ায় দৈনিক সংক্রমণ ২১০০০ ছুঁয়েছে। আসল সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি বলে দাবি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের। অধিকাংশ হাসপাতালে উপচে যাচ্ছে রোগীর ভিড়ে। এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।