হার্ট ভাল রাখতে কী কী নিয়ম মানবেন ডায়াবেটিকেরা? ছবি: ফ্রিপিক।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডায়াবিটিস। বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবিটিসে ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেক সময় এই হার্ট অ্যাটাক এতটাই যন্ত্রণাহীন হয় যে, তা নিঃশব্দে আসে এবং রোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।
হৃদ্রোগের চিকিৎসক দিলীপ কুমারের মতে, যদি কোনও ডায়াবিটিস রোগী শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথার মতো সমস্যায় ভোগেন, তাঁকে অবিলম্বে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। অনেক সময়েই দেখা যায়, ডায়াবিটিসের রোগীদের হাত-পা অসাড় হয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে হাঁটাচলা করতে গেলেই হাঁপ ধরে যাচ্ছে, শ্বাসের সমস্যাও হচ্ছে। রাতে শুয়ে ঘামও হয় অনেকের। এ সবই হৃদ্রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই সময় থাকতে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ডায়াবিটিস ধরা পড়লে প্রথমেই খেয়াল রাখা উচিত, সন্ধ্যার দিকে পায়ের পাতা ফুলছে কি না। এই সমস্যা দেখা দিলে সময় না নষ্ট করে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে চললে পরবর্তী কালে ডায়াবিটিসের রোগীদের চোখ, কিডনি, নার্ভ, হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বড়সড় ক্ষতি রোখা সম্ভব।
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের হৃদ্রোগের চিকিৎসক শুভানন রায়ের কথায়, ডায়াবিটিসের রোগীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হার্টের পরীক্ষা করান না। এমনও দেখা গিয়েছে, হার্টে ব্লকেজ রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে, অথচ সে ব্যাপারে ঠিকমতো পরীক্ষাই হয়নি। বুকে চিনচিনে ব্যথা, মাঝেমধ্যেই বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরেও রোগী সতর্ক হননি। ফলে একটা সময়ে গিয়ে দেখা যায়, হার্টরেট বা হৃৎস্পন্দনের হার বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তখন স্টেন্ট বসানোর দরকার পড়ে। ডায়াবিটিস রোগীদেরই হার্টে ব্লক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিয়োরের মতো সমস্যা বেশি হয়। ডায়াবিটিস-জনিত হার্টের অসুখের নাম ‘ডায়াবিটিক কার্ডিয়োমায়োপ্যাথি’। তাই আগে থেকেই সাবধান হওয়া জরুরি।
কী ভাবে হার্টের খেয়াল রাখবেন?
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, সঠিক সময়ে ইনসুলিন নিতে হবে এবং শর্করা জাতীয় খাবার কমই খেতে হবে। মিষ্টি খাওয়া একেবারেই চলবে না। আর বাইরের খাবার তো নৈব নৈব চ।
সিগারেট ও মদ্যপানে লাগাম টানতে হবে। যাঁরা সুগারের ওষুধ খাচ্ছেন বা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য ধূমপান বা মদ্যপান বিপজ্জনক। নিকোটিন শরীরে ঢুকলেই তা বিষক্রিয়া করবে।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়া চলবে না। অনেক ডায়াবিটিসের রোগীই চিনির বদলে গুড় বা মধু খান। এ সবও কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
ডায়াবিটিসের রোগীদের ‘অ্যাথেরোসক্লেরোসিস’ হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। এ ক্ষেত্রে ধমনীর দেওয়ালের মধ্যে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমতে থাকে। একে বলে ‘প্লাক’। এর ফলে ধমনী সঙ্কীর্ণ হয়ে রক্তপ্রবাহকে বাধা দিতে পারে। তখন হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়াবিটিসের রোগীদের নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ছে, না কমছে। সেই সঙ্গে ইসিজি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি, ট্রেডমিল টেস্ট করিয়ে রাখলে ভাল হয়। সেই সঙ্গে লিপিড প্রোফাইল টেস্টও করিয়ে রাখতে হবে।