ইমো প্রদেশের ওহাজি-এগবেমায় সেই বিস্ফোরণস্থল। রয়টার্স
রাতের অন্ধকারে এক বেআইনি তেল শোধনাগারে বিস্ফোরণের জেরে নাইজিরিয়ায় প্রাণ হারালেন শতাধিক।
দেশটির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ইমো প্রদেশের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসে শনিবার সকালে। প্রশাসন সূত্রের খবর, শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০৮ জনের মৃত্যুর খবর এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারের তরফে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
সংবাদমাধ্যমের কাছে ঘটনাস্থলের চিত্র তুলে ধরেন সে দেশের পেট্রোলিয়াম সম্পদ বিষয়ক কমিশনার গুডলাক ওপায়াহ। তাঁর কথায়, ‘‘পৌঁছে দেখি গোটা চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দগ্ধ দেহগুলি। শরীরগুলি এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছিল যে পরিচয় নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ এক দমকলকর্মী জানান, গাছের উপর থেকেও বেশ কয়েকটি দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। মনে করা হচ্ছে, হয়তো প্রাণ বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তাঁরা। তবে শেষরক্ষা হয়নি।
ইমো প্রদেশের ‘সুপ্রিম কাউন্সিল অব অয়েল অ্যান্ড গ্যাস প্রডিউসিং এরিয়াস’-এর প্রেসিডেন্ট জেনারেল কলিন্স আজি জানান, ইমো এবং রিভারস প্রদেশের সীমানা অঞ্চলের জঙ্গল থেকে প্রথম জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এর পর নিমেষেই গাঢ় কালো ধোঁয়া ঢেকে ফেলে গোটা এলাকার আকাশ। কলিন্সের মন্তব্য, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি এ ধরনের দুর্ঘটনার কথা। এখনও পর্যন্ত ১০৮টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’’ বেআইনি ওই শোধনাগারের পরিচালক ফেরার। তার খোঁজে জোর তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নাইজিরিয়ার দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের একাধিক বেআইনি শোধনাগার রয়েছে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি। সরকারি এবং বেসরকারি পাইপলাইন থেকে তেল চুরি করে শোধন করা হয় এই এ সব জায়গায়। যা বিক্রি করা হয় কালো বাজারে।
এই দুর্নীতির জেরে বহুদিন ধরেই বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে নাইজিরিয়ার অর্থনীতি। তেলের পাইপলাইনে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায় নাইজিরিয়ায়। পাইপলাইনগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের পাশাপাশি যার এক নম্বর কারণ হল এই তেল চুরি। পাইপলাইনে বিস্ফোরণের জেরে অতীতেও একাধিক দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে নাইজিরিয়া। প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। তবে এর আগে এ ভাবে শোধনাগারে বিস্ফোরণের জেরে এতজনের প্রাণ সংশয়ের ঘটনার নজির নেই বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা।