হোমি জাহাঙ্গির ভাবা। অ্যালবাম থেকে।
ভারতের প্রবাদপ্রতীম পরমাণু বিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গির ভাবা কি খুন হয়েছিলেন? আর সেই ঘটনায় কি জড়িত ছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)? ’৬৬ সালের জানুয়ারিতে এয়ার ইন্ডিয়ার যে বিমানটিতে চেপে ভিয়েনা যাচ্ছিলেন ভাবা, সেই বিমানে কি বোমা রাখা হয়েছিল? দুর্ঘটনা নয়? ওই বোমা বিস্ফোরণেই সুইজারল্যান্ডে আল্পস পর্বতমালার মঁ ব্ল্যাঁ-এ ভেঙে পড়েছিল ভাবার বিমান?
টেলিফোনে সিআইএ’র এক পদস্থ কর্তার সঙ্গে এক সাংবাদিকের কথোপকথনের রেকর্ড করা অংশের ভিত্তিতে এই দাবি করেছে ‘টিবিআরনিউজ ডট ওআরজি’ নামে একটি ওয়েবসাইট। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বোয়িং-৭০৭ বিমানটির নাম ছিল ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। সেই বিমানে চেপে ভিয়েনায় একটি জরুরি সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ভাবা। সেই বিমান দুর্ঘটনার খবর ’৬৬-র ২৫ জানুয়ারি সবক’টি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।
‘টিবিআরনিউজ ডট ওআরজি’ নামে ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই সিআইএ’র অফিসার রবার্ট টি ক্রাওলির সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছিল সাংবাদিক গ্রেগরি ডগলাসের। সেই সময়ই সাংবাদিক ডগলাসকে সিআইএ অফিসার ক্রাওলি ভাবার বিমানে বোমা রাখার কথা কবুল করে ফেলেন। দাবি, সেই টেলি-কথোপকথনের অনুলিপি ওই ওয়েবসাইটের কাছে পৌঁছয় ২০০৮-এর নভেম্বরে।
সেই টেলি-কথোপকথনের যে অনুলিপি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সিআইএ অফিসার ক্রাওলিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বুঝতেই পারছো, ছয়ের দশকে আমরা ভারতকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভারত ওই সময় যে শুধুই পরমাণু বোমা বানানোর তোড়জোড় শুরু করেছিল, তাই নয়; তড়িঘড়ি পরমাণু বোমা বানানোর জন্য শুরু করে দিয়েছিল কাজও। আর ওই সময় রাশিয়ার (পড়ুন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) সঙ্গে খুব দহরম মহরম ভারতের...’’
সাংবাদিক ডগলাসের সঙ্গে ক্রাওলির টেলিফোনে কথাবার্তা চলার সময় সিআইএ অফিসার ভাবার প্রসঙ্গে চলে যান। ভাবা সম্পর্কে ক্রাওলি বলেন, ‘‘বিশ্বাস করো, ওই লোকটা খুব ভয়ঙ্কর ছিল। একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল (পড়ুন, বিমান দুর্ঘটনা)। পরমাণু বোমা নিয়ে লোকটা আমাদের কপালের ভাঁজ আরও বাড়ানোর জন্য যাচ্ছিল ভিয়েনায় একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। তাই ওর বিমানে আগেভাগেই রাখা ছিল একটি বোমা...’’
ঘটনা হল, ’৬৫-র অক্টোবরেই অল ইন্ডিয়া রেডিও’য় একটি অনুষ্ঠানে ভাবা বলেছিলেন, সরকার সবুজ সঙ্কেত দিলে দেড় বছরের মধ্যেই পরমাণু বোমা ভারত বানিয়ে ফেলতে পারবে।
আরও পড়ুন- সৌরমণ্ডলের বাইরে এই প্রথম চাঁদ দেখল মানুষ
আর তার ঠিক তিন মাসের মধ্যেই আল্পসে হারিয়ে যায় ভাবার বিমান! ১৯৫০ সালের ৩ নভেম্বর মঁ ব্লাঁ-য় ৪৮ জন যাত্রী নিয়ে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুযারি এয়ার ইন্ডিয়ার মুম্বই-নিউ ইয়র্ক বোয়িং ৭০৭ বিমান ১১৭ জন যাত্রী নিয়ে হারিয়ে যায় মঁ ব্লাঁর চূড়ার কাছে। এই বিমানের যাত্রী ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গির ভাবা। দু’টি দুর্ঘটনাতেই কোনও যাত্রীর দেহাবশেষও এত দিন মেলেনি। এর আগে ওই দুর্ঘটনাস্থলে ভারতীয় সংবাদপত্র ও ক্যামেরা মিলেছিল। ২০১৩ সালে পাওয়া গিয়েছিল বহুমূল্য রত্নে ভরা বাক্স।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গিয়ে আল্পস-এর মঁ ব্লাঁ-য় ড্যানিয়েল রশ নামে এক জন সম্ভবত খুঁজে পেয়েছেন প্রায় অর্ধশতকেরও আগে হারিয়ে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বা দু’টি বিমানের যাত্রীদের দেহাবশেষ।
মঁ ব্লাঁ-র বসনস হিমবাহে খোঁজ চালাতে গিয়ে রশ-এর চোখে পড়ে একটি কাটা হাত ও পায়ের উপরের অংশ। তিনি জানান, এই প্রথম কোনও মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন।