যুদ্ধ-বিধ্বস্ত: বিস্ফোরণে রুশ হামলায় ছিন্নভিন্ন জানলা দিয়ে বৃদ্ধের শূন্য-দৃষ্টি। শনিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিভে। ছবি: রয়টার্স
শুধু কাফনের মতো সাদা একখানা পর্দা কোনও ভাবে অক্ষত থেকে গিয়েছে। যেন সব শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ঝাঁঝরা ঘরদোরের আব্রুটুকু রক্ষার এক অসহায় চেষ্টা। শনিবার সকালে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কিভ শহরের বহুতল আবাসনের মাঝের অন্তত পাঁচটি তলা খুবলে নিয়েছে। তারই এক চিলতে দৃশ্য বিশ্বের গোচরে এনেছে ক্যামেরার দূর-দৃষ্টি।
বিভিন্ন শহর আক্রমণ করতে করে ইউক্রেনের রাজধানী কিভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী। অভিযোগ, মুখে যা-ই বলা হোক, এ পর্যন্ত নিদেনপক্ষে ৪০টি আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হানা হয়েছে। এ দিন সকালে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে পড়ে কিভের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে। একটি জুলিয়ানি বিমানবন্দরের কাছে। অন্যটি সিভ্যাস্টপোল স্কোয়্যারের সামনে আবাসনে। তবে ওই ঘটনায় কোনও প্রাণহানি হয়নি বলে সরকারি উপদেষ্টা জানিয়েছেন।
খেরসনে যুদ্ধ হয়েছে ঘোরতর। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি নিক প্যাটন ওয়ালশ সেই অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সে এক ভয়ানক দৃশ্য। সার সার সাধারণ গাড়ি চলেছে ব্রিজের উপর দিয়ে। দু’পাশে ছড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ, জ্বলন্ত ট্রাক। এই আক্রমণের মধ্যেও ছন্দে চলা ছাড়া জীবনের আর গতি নেই।’’
বাহান্ন বছরের ওলেনা কুরেলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এখন যুদ্ধের মুখ। ক্ষেপণাস্ত্রে চুরমার হয়েছে ঘর। জানলার শার্সি ভেঙে রক্তাক্ত মুখ। খারকিভ এলাকার চুগুয়েভের বাসিন্দা, ইতিহাসের প্রৌঢ়া শিক্ষিকা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এমন-ভবিষ্যত তাঁর কল্পনাতেও ছিল না। বলেছেন, ‘‘বেঁচে গেছি। বরাতজোরে। যতটুকু জীবনীশক্তি পড়ে আছে, তা দিয়ে ইউক্রেনের জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত।’’
ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ক্ষেপণাস্ত্রে বিপর্যস্ত কিভের আবাসনের ছবি টুইট করেছেন শনিবার। সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘কিভ— আমাদের চমৎকার, শান্ত শহরটা রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র-হানার মধ্যে আরও একটা রাত টিকে রইল। গৃহস্থ-বাড়িতে আঘাত করছে। বিশ্বের কাছে আর্জি জানাচ্ছি: রাশিয়াকে পুরোপুরি একঘরে করুন, রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করুন, তেলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন, ওদের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিন। রাশিয়ার যুদ্ধ-আততায়ীদের থামান।’’