উদ্ধার হওয়ার পর কেঁদে ফেলেন লুকাস। ছবি: ফেসবুক।
মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। চেনা পরিচিত রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে যে তাঁর জীবনে এমন বিপদ ঘনিয়ে আসবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বছর চৌত্রিশের লুকাস ম্যাকক্লিশ। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা ক্রুজ়ের পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিলেন লুকাস। কিছু ক্ষণ চলার পর দিক্ভ্রান্ত হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। অবশেষে ১০ দিন পর লুকাসকে জঙ্গলে খুঁজে পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
গত ১১ জুন পথ চলা শুরু করেছিলেন লুকাস। যাত্রাপথ মাত্র তিন ঘণ্টার হওয়ায় সঙ্গে ছিল না বিশেষ কিছুই। এমনকি, মোবাইল ফোনও ছিল না সঙ্গে। লুকাসের পরিবারের লোকেরাও তাঁর নিঁখোজ হওয়ার বিষয়ে জানতেন না কিছু। ১৬ জুন পারিবারিক নৈশ্যভোজে লুকাস যোগ না-দেওয়ায় তাঁরা চিন্তায় পড়ে যান। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। শুরু হয় খোঁজ।
এই অবস্থায় উদ্ধার করা হয় লুকাসকে। ছবি: ফেসবুক।
পথ হারিয়ে জঙ্গলে ৯ রাত, ১০ দিন কাটানোর পর লুকাসের খোঁজ মেলে। শেরিফের অফিস থেকে জানানো হয়, অনেকেই জঙ্গল থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার শুনতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক কোন জায়গা থেকে সেই শব্দ আসছিল তা বোঝা যাচ্ছিল না। লুকাসকে খুঁজতে ড্রোনের সাহায্য নিয়েছিল সান্টা ক্রুজ় শেরিফের অফিস। কে-৯ স্নিফার কুকুরের সাহায্যও নেওয়া হয়েছিল।
উদ্ধারকারীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন লুকাস। তত দিনে ১৩ কেজি ওজন কমে গিয়েছে তাঁর। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁর শরীরে বড় কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। লুকাস বলেন, “সারা বছরের হাঁটা এই ১০ দিনে হেঁটে নিয়েছি। ঝর্না থেকে জুতোয় ভরে জল খেয়েছি। বুনো ফল খেয়ে দিন কাটিয়েছি। সাহায্যের জন্য চেঁচিয়ে গলা ধরা গিয়েছে। আমি ক্লান্ত।”
লুকাসের অ্যালবিনো রয়েছে। দিনের বেলায় রোদ এড়িয়ে থেকেছেন এই ক’দিন। রাতে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে ফাঁপা গাছের গুঁড়িতেও থেকেছেন। তিনি আরও বলেন, “এক দিন একটি পাহাড়ি সিংহ আমার পিছু নিয়েছিল। বেশ কিছু ক্ষণ সে আমায় অনুসরণ করে। যদিও আমি তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছিলাম।”
চেনা রাস্তায় পথ হারিয়ে ফেলবেন তা ভাবতেও পারেননি লুকাস। তিনি বলেন, “এই রাস্তায় আরও অনেক বার হেঁটেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক দাবানলের ফলে যাত্রাপথের চিহ্ন মুছে যাওয়ায় রাস্তা হারিয়ে ফেলি। রোজই মনে হত রাত ৮টার মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতে পারব।” সব শেষে যোগ করেন, “সারা জীবন এখানেই আমার বসবাস, উত্তর থেকে দক্ষিণে অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি। কখনই বুঝতে আমাদের পাহাড়গুলি এতটা নির্মম।”