ফাইল ছবি
১০ ডাউনিং স্ট্রিট দখলের দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ় ট্রাসের সামনে বর্তমানে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ব্রিটেনের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক। লড়াইয়ের পরিসর বিস্তৃত হওয়ার পরে মনে করা হচ্ছে এমনটাই। এর মাঝে অতীত থেকে উঠে আসা বিভিন্ন ঘটনা বার বার বিতর্কের চোরাবালিতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনককে। সম্প্রতি তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে ২০০৭ সালে বিবিসি-র তৈরি করা এক তথ্য চিত্রের একটি ভিডিয়ো ক্লিপিং। যেখানে সুনককে বলতে শোনা গিয়েছিল, সব শ্রেণির মানুষই তাঁর বন্ধু তবে শ্রমিক শ্রেণির কারও সঙ্গে তাঁর নাকি সখ্য নেই!
সম্প্রতি জনপ্রিয় সঞ্চালক অ্যান্ড্রু নিলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সুনক। সেখানে এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে সুনকের দিকে তা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন নীল। ভাইরাল হওয়া সেই সাক্ষাৎকার নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সুনক অনুষ্ঠানে জানান, ২০০৭ সালে ছাত্রাবস্থায় ওই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর যে শ্রমিক শ্রেণির কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব নেই তা ফলাও করে বলা সত্যিই ‘বোকামি’ হয়েছে, স্বীকারোক্তি সুনকের। শ্রেণি বিষয়ে নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে একটি সোফায় এলিয়ে বসে সাংবাদিক বন্ধুকে সুনক বলেছিলেন, ‘‘সব শ্রেণির বন্ধুই রয়েছে আমার...কিন্তু... শ্রমিক শ্রেণিরকেউ নেই।’’
তবে ‘অপরিণত’ বয়সের সেই মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী সুনকের এখনকার দাবি, ‘‘ছাত্রাবস্থায় আমরা সকলেই অনেক বোকা বোকা কথা বলে থাকি। তবে আপনাদের সামনে আমি আমার পারিবারিক ইতিহাস নিয়েও অনেক বার কথা বলেছি। আমি এক অভিবাসী পরিবারের সন্তান।’’ সঙ্গে সুনকের আরও সংযোজন, ‘‘আমি আমার মায়ের ওষুধের দোকানে কাজ করে বড় হয়েছি... আর এ রকম কাজ করা মানেই অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে পরিচয় এবং যোগাযোগ। সেটাই স্বাভাবিক। তা হলে বুঝতেই পারছেন...!’’
তবে নিজে অভিবাসী পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও আশ্রয় চাইতে আসা অভিবাসীদের একেবারে রোয়ান্ডায় পাঠানোর মতো কড়া সরকারি নীতির পক্ষপাতী কেন তিনি? নিলের এই প্রশ্নবাণের জবাবে সুনক বলেন, ‘‘এই দেশে মানুষকে আপন করে নেওয়ার একটি গর্বের ইতিহাস রয়েছে তা আমরা সকলেই জানি। তবে হ্যাঁ, যখন তা পুরোটাই সঠিক পদ্ধতিতে এবং নিয়ন্ত্রিত ভাবে করা হয় তখনই। কারণ মনে রাখতে হবে, আমরা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকেই জায়গা দিতে পারি। আমার মনে হয় দেশবাসীও এর সঙ্গে একমত হবেন।’’
এ পর আসে কর প্রসঙ্গ। প্রথমেই প্রশ্ন আসে তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তিকে নিয়ে। অভিযোগ, ‘নন-ডমিসাইল ট্যাক্স স্টেটাস’ ধরে রেখে তাঁর পারিবারিক সংস্থা ইনফোসিস-সহ ভারত এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা আয় বাবদ ব্রিটেনে কর দেওয়া এড়িয়ে গিয়েছেন অক্ষতা। যা ‘ভুল’ হয়েছে বলেই এ দিন স্বীকার করে নিয়েছেন সুনক। সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘তিনিও (অক্ষতা) বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন এবং একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। নিজের পরিবারের এমন বিষয় সামনে এলে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয় ঠিকই, আমি এই ঘটনা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমার মনে হয় এগুলো আমাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আরও প্রস্তুত করে দিয়েছে।’’ কর বাড়ানো নিয়েও এর পর সুনককে কড়া সওয়াল করেন নিল। ২০১৯ সালে কনজ়ারভেটিভ দলের ম্যানিফেস্টোয় কর নিয়ে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি যে তিনি রাখতে পারেননি তা মেনে নিয়েছেন সুনক। তবে সুনকের দাবি, এর জন্য অনেকটাই দায়ী অতিমারি।