দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিসে চলছে ইজ়রায়েল-হামাস সংঘর্ষ। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।
তাদের দাবি না মানলে ইজ়রায়েলি পণবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে না, জীবিত ফিরবেন না তাঁরা—হামাস সশস্ত্র বাহিনীর এই হুমকির পরে দক্ষিণ গাজ়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর খান ইউনিসে হামলা আরও তীব্র করল ইজ়রায়েল। রবিবার ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অস্ত্র সংবরণ করতে বলেন। সেই সঙ্গে এ-ও বলেন, গত কয়েক দিনে হামাসের একাধিক সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। অর্থাৎ বোঝা যায়, হামাসের দিন শেষ হয়ে আসছে। যদিও আত্মসমর্পণের প্রমাণ ইজ়রায়েলি বাহিনী প্রকাশ করেনি।
নেতানিয়াহুর এই হুঁশিয়ারির পরেই হামাসের মুখপাত্র আবু ওবেইদা একটি রেকর্ডিংয়ে জানান— তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত ইজ়রায়েল এক জন পণবন্দিকেও জীবিত নিয়ে যেতে পারবে না। হামাসের দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম হল, ইজ়রায়েলের কারাগারে বন্দি প্যালেস্টাইনিদের মুক্তি। সমাজকর্মীদের মতে, বন্দি প্যালেস্টাইনিদের সংখ্যাটি প্রায় সাত হাজার। আর ইজ়রায়েলের দাবি, ১৩৭ জন ইজ়রায়েলের বাসিন্দাকে পণবন্দি বানিয়ে রেখেছে হামাস।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপুঞ্জের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আমেরিকার ভিটো দেওয়ার ঠিক পরেই রবিবার থেকে সেখানে হামলা শুরু করেছিল ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। তাদের দাবি ছিল, যুদ্ধ বিরতির সুযোগ নিয়ে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে হামাসের সদস্যেরা।
সোমবার খান ইউনিসে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। তাদের দাবি, সোমবার গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলের উদ্দেশে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। হামলা বাড়ানো হয়েছে তার পরেই। রবিবারই ইজ়রায়েল জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ গাজ়ায় হামাসের একটি সেনা ঘাঁটি, একটি সুড়ঙ্গ ও একটি যোগাযোগ কেন্দ্র-সহ ২৫০টি এলাকা ধ্বংস করেছে তারা।
প্যালেস্টাইনের অপর একটি সশস্ত্র বাহিনীর পাল্টা দাবি, ইজ়রায়েলি সেনা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ঢুকে সুড়ঙ্গের খোঁজ করছিল, সেই বাড়িটাকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছে তারা।
এ দিকে, প্রায় তিন মাস ধরে হামাস ও ইজ়রায়েলের সংঘর্ষে কার্যত বিধ্বস্ত গাজ়া। হামলায় প্রায় দু’লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। হামাসের সদস্যেরা হাসপাতালকে তাদের ঘাঁটি বানাচ্ছে, এই দাবি করে একের পর এক হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। ফলে, গাজ়ার বেশির ভাগ হাসপাতালই এখন ধ্বংসস্তূপ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংগঠনের মতে, গাজ়ার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৪টি মাত্র চালু রয়েছে। সেগুলোও চলছে কায়ক্লেশে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আল-শিফা হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। তাঁরা দাবি করেছেন, খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, বিদ্যুৎ— কিছুই মিলছে না। বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, গাজ়া ভূখণ্ডের ২৪ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে ১৯ লক্ষই এখন ঘরছাড়া। আর এই ঘরছাড়াদের প্রায় অর্ধেকই শিশু। যুদ্ধ শুরুর পরে ইজ়রায়েল বাসিন্দাদের দক্ষিণাংশের শহরগুলিতে আশ্রয় নিতে বলেছিল। কিন্তু সংঘর্ষ তৃতীয় মাসে পড়তে সেই এলাকাগুলিতেও হামলা শুরু করল ইজ়রায়েল। মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলির মতে, সাধারণ মানুষের জন্য কোনও নিরাপদ জায়গাই আর বেঁচে নেই গাজ়ায়।
এ দিকে, জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ অধিকার প্রয়োগ করে ইজ়রায়েলকে প্রায় ১৪ হাজার অস্ত্র সরবরাহ করেছে আমেরিকা। অস্ত্র সরবরাহ ও ভিটো দেওয়া নিয়ে আমেরিকার যুক্তি, এখন সংঘর্ষ থামালে গাজ়া সম্পূর্ণ ভাবে হামাসের দখলে চলে যাবে। ফলে ভবিষ্যতে আবার যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে থাকবে। এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি। তাদের প্রশ্ন, গাজ়ার অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে বরাবর সরব ছিল আমেরিকা। কিন্তু তাদের বর্তমান পদক্ষেপ তার সঙ্গে একেবারেই মিলছে না।