গুগলের নয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘চালচলন’ দেখে হতবাক তার স্রষ্টারাও। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলা তাকে এক অক্ষরও শেখানো হয়নি। অথচ গড়গড়িয়ে বাংলায় অনুবাদ করছে ভিন্দেশে তৈরি এই প্রযুক্তি। এ হল গুগলের নয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) —নাম ‘বার্ড’। চ্যাটজিপিটি-কে টেক্কা দিতে প্রযুক্তির বাজারে পা রেখেছে গুগলের এই নতুন সৃষ্টি। যার ‘চালচলন’ দেখে হতবাক তার স্রষ্টারাও। সম্প্রতি বার্ড-এর আবির্ভাব নিয়ে সাক্ষাৎকারে তেমনই বলেছেন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, ভাইস প্রেসিডেন্ট সিসি শাও এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস মানিকা।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ২০২৩ সালে মানবসভ্যতায় যে বিবর্তন আসছে, তা হল— এক জন মানুষের সঙ্গে কী ভাবে তাঁর সমকক্ষ ব্যক্তি হিসেবে কথা বলা যায়, তা নিজে থেকেই শিখে ফেলছে যন্ত্র! তাতে উদ্ভাবনী শক্তি আছে, সত্য আছে, ভুল আছে, মিথ্যাও আছে। অর্থাৎ যন্ত্র সত্যি-মিথ্যা সব নিয়ে ক্রমশ ‘মানুষ’ হয়ে যাচ্ছে!
মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই অতি পরিচিত প্রশ্ন— ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?’ পিচাই বলেন, ‘‘মানুষ যে ভাবে একে ব্যবহার করবেন, তা-ই হবে।’’
ইন্টারনেটে যে সব তথ্য খোঁজা হয়, তার ৯০ শতাংশ হয় গুগলে। কিন্তু এই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এর সাম্রাজ্যে ভাগ বসিয়েছে নতুন চ্যাটবট, যার নাম চ্যাটজিপিটি। এতে মাইক্রোসফ্ট বিপুল লগ্নি করেছে। একে টক্কর দিতে এসেছে গুগলের বার্ড। কী বলতে হবে, কী লিখতে হবে, ব্লগ পোস্টে কী লেখা যায়, ইমেলে কী লিখতে হবে, সবেতে সাহায্য করবে সে। শাও জানিয়েছেন, গুগলের মতো এটি ইন্টারনেটে উত্তর খুঁজবে না। বার্ড উত্তর দেবে তার ভান্ডারে থাকা প্রোগ্রাম থেকে। সেই প্রোগ্রাম কিন্তু সে নিজে নিজে শিখেছে।
তিন প্রযুক্তিবিদের ব্যাখ্যা, এর ভিতরে যে সব মাইক্রোচিপ রয়েছে, তা মানুষের মস্তিষ্কের থেকে একশো হাজার গুণ শক্তিশালী। বার্ড-কে বলা হয়েছিল, ‘নিউ টেস্টামেন্ট’-কে সংক্ষিপ্ত করে বলতে। ৫ সেকেন্ডে ১৭টি শব্দে উত্তর দিয়েছে সে। এর পরে তাকে ল্যাটিনে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। অনুবাদ করতে ঠিক ৪ সেকেন্ড নেয় বার্ড। এর পরে তাকে ৬টি শব্দ দিয়ে গল্প লিখতে বলা হয়। ‘‘ফর সেল। বেবি শুজ়। নেভার ওর্ন।’’ পাঁচ সেকেন্ড পরে যে অণুগল্প তৈরি হয়, তা হল এ রকম— ‘‘দ্য শুজ় ওয়্যার এ গিফট ফ্রম মাই ওয়াইফ, বাট উই নেভার হ্যাড এ বেবি...’’। স্বামী বলছেন, তাঁর স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে পারেননি। গর্ভের সন্তান গর্ভেই মারা গিয়েছে।
কিন্তু কী ভাবে এ সব সম্ভব! জেমস জানিয়েছেন, মাসের পর মাস ইন্টারনেটে মজুত নানা বিষয়, সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছে বার্ড। মানুষের মতো করেই ভাবছে সে। জেমসের বিশ্লেষণ— শব্দ ‘খুঁজছে’ না সে, ভাবছে। তাঁর কথায়, ‘‘কখনও কোনও কথায় মনে হতেই পারে, যন্ত্রের আড়ালে কোনও মানুষ রয়েছে। তা কিন্তু নেই।’’
বার্ড সংক্রান্ত যা যা জানা গিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনা, এর ভাষা শিক্ষা। দেখা গিয়েছে, এই এআই ব্যবস্থাটি নিজে থেকেই শিখে ফেলছে নতুন জিনিস। কী ভাবে সেটা হচ্ছে, কেউ জানে না। যেমন, এই এআই-কে বাংলা শেখানো হয়নি। জেমস জানান, হঠাৎই তাঁরা আবিষ্কার করেন, পুরো বাংলায় অনুবাদ করে ফেলছে বার্ড। এখন তাঁরা বিষয়টা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন, যাতে একই পদ্ধতিতে হাজার হাজার ভাষা শিখে ফেলতে পারে বার্ড।
পিচাইয়ের কথায়, ‘‘কাজের জগতে আমরা একটা কথা বলে থাকি— ‘ব্ল্যাক বক্স’। যেটা আমরা পুরোপুরি জানি না, স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারব না, কোথায় ভুল জানি না। একটা ধারণা আছে মাত্র।’’
তা হলে কি নয়া এআই-এর স্রষ্টারাও তাঁদের সৃষ্টি সম্পর্কে জানেন না? উত্তরে পিচাই বলেন, ‘‘মানুষের মন কী ভাবে কাজ করে, সেটাই কি আমরা পুরোপুরি জানি!’’