ক্যাপশন- স্কটল্যান্ড পুলিশ, ছবি রয়টার্স
আট ঘণ্টা ধরে প্রতিবেশীদের সমবেত প্রতিবাদ এবং এক পাকিস্তানি আইনজীবীর সাহায্য। স্কটল্যান্ডে অভিবাসন সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে ধৃত দুই ভারতীয়কে ডিটেনশন শিবিরে পাঠানো থেকে মুক্তি দিলেন ওঁরাই।
সুমিত সহদেব, পেশায় শেফ। লখবীর সিংহ, পেশায় মেকানিক। ওঁরা ব্রিটেনে রয়েছেন ১০ বছর ধরে। বৃহস্পতিবার গ্লাসগো শহরের পোলকশিল্ডস এলাকায় ওঁদের বাড়িতে হাজির হন অভিবাসন দফতরের ছ’জন অফিসার এবং স্কটল্যান্ড পুলিশ। দু’জনকে ধরে একটি ডিটেনশন ভ্যানে তুলে ডিটেনশন শিবিরে নিয়ে যেতে চাইছিলেন ওঁরা। হতে দিলেন না এলাকাবাসীরাই। ডিটেনশন ভ্যানকে ঘিরে ধরে টানা আট ঘণ্টা প্রতিবাদ জানিয়ে গেলেন ওঁরা। চিৎকার করে বললেন, ‘‘পুলিশ চলে যাও! আমাদের পড়শিদের ছেড়ে দাও!’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সেই ভিডিয়ো।
সুমিত-লখবীরকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন স্থানীয় আইনজীবী আমির আনওয়ার। এলাকায় তখন শুরু হয়ে গিয়েছে ইদের উৎসব। আনোয়ার বললেন, ‘‘ইদের দিনে বিদেশ দফতর এমন কাজ করে কী করে? ওরা মানুষের জীবন নিয়ে ভাবে না। না ভাবুক, গ্লাসগোবাসীরা তো ভাবে! এই শহর শরণার্থীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে। মানুষের রক্তে, ঘামে, চোখের জলে এই শহর গড়ে উঠেছে। আমরা সুমিতদের পাশে থাকবই।’’ আট ঘণ্টা পুলিশের গাড়ি আটকে রেখে ওঁরা সুমিতদের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন। জামিন দিয়ে সুমিতরা ভ্যান থেকে নেমে এলেন। আনোয়ারের হাত ধরে এগিয়ে গেলেন সামনের মসজিদের দিকে। সেখানে তখন এলাকার সকলে জড়ো হয়েছেন ওঁদের স্বাগত জানাবেন বলে। লখবীর বলেছেন, ভ্যানে ওঠার পর কপালে কী আছে বুঝতে পারছিলেন না। কান্না ভেজা গলায় প্রতিবেশীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনাটি নিয়ে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জেন টুইটারে লিখেছেন, ‘‘এই ঘটনার পরে বিদেশ দফতরের উচিত নিজেকে প্রশ্ন করা। ইদের দিনে, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় অতিমারির মধ্যে এই রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ কী করে করলেন!’’ লেবার পার্টির এমপি ক্লডিয়া ওয়ে টুইট করে লিখেছেন, ‘‘ইদের দিনে বিদেশ দফতর ওঁদের আটক করেছিল! মানবতা আর একতার শক্তি দিয়ে গ্লাসগোর মানুষ দেখিয়ে দিলেন, কী ভাবে না বলতে হয়।’’ মুখ বাঁচাতে বিদেশ দফতর জানিয়েছে, অভিবাসনে অনিয়ম সন্দেহ হওয়াতেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। স্কটল্যান্ড পুলিশ জনস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার দিকে তাকিয়েই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ধৃতদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।